‘নেতামন্ত্রীদের নাম ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হওয়া যায়, ভাইরাল হ‌ওয়া যায়!’ তবে কি অনির্বাণের ‘হুলিগান‌ইজম’কে ব্যঙ্গ করলেন শিলাজিৎ?

ট্রোল–কটাক্ষ–সমালোচনা… এ সব যেন আজকের সমাজমাধ্যমের নিত্যদিনের রুটিন। কিন্তু এ সবেই আর বিচলিত হন না শিলাজিৎ মজুমদার। বরং নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন—যে কোনও জনপ্রিয় মুখকে আক্রমণ করলেই দৃষ্টি আকর্ষণ পাওয়া যায়। শিগগিরই একটি ‘রোস্ট’ অনুষ্ঠানে নিজেকে সম্পূর্ণ অন্য রূপে হাজির করবেন গায়ক-অভিনেতা। মঞ্চে বসেই দেখবেন কৌতুকশিল্পীরা তাঁকে ব্যঙ্গ করছেন। সেই প্রেক্ষিতেই উঠল ‘রোস্ট’–এর মজা আর অসভ্যতার সীমারেখা নিয়ে প্রশ্ন।

শিলাজিতের মতে, রোস্ট যদি নিছক বিনোদনের পরিসরে হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু পরিচয় লুকিয়ে ট্রোল করা—সেটা কোনওভাবেই নয়। তিনি জানান, ছোটবেলায় তাঁকে ভুঁড়ি বলে ডাকা হত, কিন্তু তাতে দীর্ঘদিন ক্ষোভ হয়নি। এখনকার দিনে মানুষ চেহারা, গায়ের রং নিয়ে খোঁচা দেওয়া যে ভুল—সে বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাই তাঁর কথায়, বন্ধুর সঙ্গে ‘মোটু’ বলে ঠাট্টা করা আর কাউকে অপমান করার উদ্দেশ্যে মন্তব্য করা—এ দু’টির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে।

সমাজমাধ্যমের আর এক দিকও তুলে ধরেন গায়ক। তিনি বলেন, একজন সাধারণ দর্শক সামান্য তোতলান বলে তাঁকে মঞ্চে প্রকাশ্যে অপমান করেছিলেন এক নামী গায়ক—এমন ঘটনা তাঁকে ব্যথিত করে। “কিছু মানুষ নিজেদের বিরাট বিজ্ঞ ভাবেন,” ক্ষোভ গোপন করেন না শিলাজিৎ। তাঁর মতে, প্রশিক্ষিত শিল্পী হয়েও অনেককে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করতে দেখা যায়, যা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমানোর মতো বিষয়েও ক্ষুব্ধ তিনি। বলেন, বহু পরিচালক স্বনামধন্য বলেই মনে করেন, শিল্পীকে কম টাকা দিতে বলতে তাঁদের অধিকার আছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কখনও কখনও তিনি আবেগে বেশি কিছু বলে ফেলেন। পরে অনুশোচনা হয় ঠিকই, কিন্তু মনে করেন—অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকা কঠিন। গানের মাধ্যমেও ব্যঙ্গ করা যায়—হুলিগানইজ়মের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক খোঁচা প্রসঙ্গে শিলাজিৎ জানান, “ওরা জানে—নেতামন্ত্রীদের নাম ব্যবহার করলেই জনপ্রিয়তা আসে।”

আরও পড়ুনঃ শ্রেয়া ঘোষালের কটক কনসার্টে বেসামাল ভিড়: ভয়ঙ্কর হুড়োহুড়িতে বিপ’জ্জ’নক পরিস্থিতি, কেউ জ্ঞান হারালেন, কারর লেগেছে চোট

‘রোস্ট’ নিয়ে বিতর্কের শেষে এক গুরুত্বপূর্ণ কথাই মনে করিয়ে দেন তিনি—সম্মতি ছাড়া ব্যঙ্গ নয়। “বন্ধুর পরিসরে ঠাট্টা চলে, কারণ সেখানে সম্পর্কের নিরাপত্তা আছে। কিন্তু যে কাউকে ইচ্ছে মতো বলে দেওয়া যায় না।” এমনকি বাবা-মায়েরও অজান্তে ‘মজার ছলে’ অপমান করতে পারেন—নিজের জীবনের উদাহরণ টেনে জানান শিলাজিৎ। তাঁর মতে, ব্যঙ্গ তখনই শিল্পে পরিণত হয়, যখন তার উদ্দেশ্য অপমান নয়, বরং হাসির মধ্য দিয়ে সামাজিক বাস্তবতা ছুঁয়ে যাওয়া।