“লাঙ্গল দিয়ে চাষ করতে বলদের দরকার, ওরা তো ছাগল…২০১১ দিয়ে টলিউডে কটা ছবি চলেছে?” “অন্যায়ের সঙ্গে সবাই মানিয়ে নিলেও, আমি শিরদাঁড়া বিক্রি করব না!” কাজের বাজারে বঞ্চনার ক্ষোভ, বি’স্ফো’রক অভিযোগে মুখ খুললেন অভিনেতা প্রদীপ ধর!

টলিপাড়ার ব্যস্ততা এবং চেনামুখদের ভিড়ের মাঝেও অভিনেতা ‘প্রদীপ ধর’কে (Pradip Dhar) আজকাল খুব একটা দেখা যায় না। দর্শকরা যদিও এখনও তাঁকে মনে রাখেন ‘রাখিবন্ধন’-এর মদনমামা বা ‘রাজযোটক’-এর কচিদা হিসেবেই। আর বড়পর্দায় দেব এবং জিতের মতো তারকাদের সঙ্গে তাঁর উপস্থিতি আজও স্বতঃস্ফূর্ত। বড়পর্দা আর ছোটপর্দায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তিনি যেন একটু আড়ালে সরে গেছেন। কলকাতার একটি ছোট ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে এখনকার দিন কাটে তাঁর।

পকেটে টাকা না থাকলেও তিনি নাকি নিজেকে ‘জমিদার’ ভাবতেই ভালবাসেন। তবে অভিনয়ে আসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না তাঁর। প্রথম থেকেই অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না বরং কাজ শুরু করেছিলেন মেকআপ দলের একজন সদস্য হিসেবে। তিনি নিজেই বলেছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে আসা মেকআপ ম্যান হিসেবেই, সেই কাজ করতে গিয়েই আমি অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি।” সেই সময়ের কাজ বলতে তিনি উল্লেখ করেন ‘গজ উকিলের হত্যা রহস্য’, যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কারের মনোনয়নও পেয়েছিলেন।

এরপরই টলিউডে লাগাতার হিট ছবিতে চরিত্ররাভিনেতা হিসেবে কাজ। তখন ‘পাগলু ২’, ‘চ্যালেঞ্জ’-সহ একাধিক ছবিতে তাঁর উপস্থিতি নজর কেড়েছিল। মেকআপের কাজ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথাও শোনালেন। অতীতের সেই সময়ের প্রতি বিরক্তি আড়াল করেননি তিনি। তাঁর কথায়, “আমাদের সময় মেকআপ যিনি করতেন তাকে আর্টিস্ট নয়, ম্যান বলা হত। মেকআপ ম্যান শব্দটা খুবই যেমন অপমানজনক শুনতে লাগে তেমনি ব্যবহার করা হতো।

আমিও একসময় বিদেশে যেতে চেয়েছিলাম এই মেকআপ ম্যান থেকে মেকআপ আর্টিস্ট হয়ে ফিরবো বলে। ভাগ্যের দোষে সেটা হয়নি।” পরে টেলিফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে তিনি অভিনয়কেই নিজের পরিচয় করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তবে, বর্তমানে তাঁকে পর্দায় না দেখার পিছনে রয়েছে কিছু অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা। কাজের প্রস্তাব এলেও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, “কাজ যে আসছে না এমন নয়, কিন্তু শেষে গিয়ে আমাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

বুঝতে পারছি একটা অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে, কিন্তু কারা সেটা বুঝতে পারছি না। গায়ে একটা রাজনৈতিক রং অবশ্যই লেগেছে সেটাও যেমন কারণ আবার গত বছর আরজিকরের প্রতিবাদে দুই একটা কথা বলে ফেলেছিলাম, সেটাই হয়তো কারোর খারাপ লেগেছে।” উল্লেখ্য, বর্তমান টলিউডের অবস্থা সম্পর্কেও তীব্র হতাশাও ব্যক্ত করেন প্রদীপ। ইন্ডাস্ট্রির চলতি পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি তিনি মন্তব্য করেছেন, “এখন বছরে কটা ছবি হয়? ২০১১ সালের পর থেকে হাতেগোনা ছবির সংখ্যা!

আরও পড়ুনঃ “পরিণত বয়সে ভালোবাসা শরীরের ঊর্ধ্বে হয়, আজীবনের জন্য শুধু পরস্পরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি!” অসফল দাম্পত্যকে ঝেড়ে ফেলে, পরিণত বয়সে দ্বিতীয় সুযোগ নিয়ে অকপট সুদীপ মুখোপাধ্যায়! মধ্যবয়সে নতুন সংসার নিয়ে সমাজকে কী বার্তা দিলেন অভিনেতা?

ছোট প্রডিউসাররা সুযোগ পায় না ছবি তৈরীর বা সরকারি প্রেক্ষাগৃহে ছবি চালানোর। শিল্পীরাও কাজ হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। একপ্রকার ছাগল দিয়ে লাঙ্গল চাষ করছে, যেখানে দরকার বলদের। শিল্পী তৈরি করতে জানে না এখনকার ইন্ডাস্ট্রি, সবটাই অবনতির দিকে। অনেকেই সবকিছু সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে কিন্তু আমি কাজ পেতে কখনোই শিরদাঁড়া বিক্রি করব না!” এই কথাগুলো দিয়েই তিনি স্পষ্ট করেছেন এদিন যে, ভবিষ্যৎ পর নিশ্চিত করতে আজও নিজের অবস্থান আর সততার সঙ্গে আপস করতে রাজি নন।