‘স্ত্রী পাশে ঘুমোচ্ছে, প্রেমিকাকে লাইন দিতে দিতেই জন্ম আমার আধুনিক গান ‘এ তুমি কেমন তুমি” ‘সুর করে গান শোনাচ্ছি প্রেমিকাকে, সৃজিত বলে আমায় দাও’ ভাইরাল সাক্ষাৎকারে কবীর সুমনের বি’স্ফো’রক দাবি!

অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ভাবনা আর অনন্য ভাষা ব্যবহারের জন্য সংগীতশিল্পী ‘কবীর সুমন’কে (Kabir Suman) নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়াটা কোনও নতুন ঘটনা নয়। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে তাঁর বক্তব্য নিয়েই সম্প্রতি চলেছিল বিতর্ক, যেখানে তিনি হিন্দি আধিপত্যের প্রসঙ্গ তুলে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সেই মন্তব্য ঘিরে সমাজ মাধ্যম সরগরম থাকতেই আবার সামনে আসে আরও একটি ভিডিও, যেখানে শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতাই নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে তাঁকে। কিন্তু এবার যেন এক ধাক্কায় আরও বড় বিতর্কের জন্ম দিলেন তিনি!

যদিও সুমনকে ঘিরে বিরোধ নতুন নয়, তবে বাংলার গানের পরিসরে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য, এটাই মনে করিয়ে দেন অনেকেই। বাংলা গানকে বিশ্বমুখী করা, ভাষা-বৈচিত্র্যের পক্ষে দাঁড়ানোর এমন নজির তিনি আগেও রেখেছেন। কিন্তু শিল্পী তেমনভাবে ব্যাখ্যা দিতে রাজি নন বরং তাঁর মতে, শিল্পের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সত্য, দুটোই প্রকাশ করা জরুরি। তবে একই সময়ে একাংশের মনে হয়েছে, এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি যেন তাঁর গানকে নতুনভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।

বিশেষ করে যাঁরা তাঁর গান দিয়ে বড় হয়েছেন, তাঁদের আবেগই যেন সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে। প্রসঙ্গত, এবার আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে তাঁর জনপ্রিয় গান ‘এ তুমি কেমন তুমি’। এই গানটিকে অনেকেই আধুনিক বাংলা সঙ্গীতের মাইলফলক মনে করেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা ভিডিওতে শিল্পী জানান, সেই গানের জন্ম নাকি মোটেই সাভাবিক ছিল না, বরং সেখানে ছিল অব্যক্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত। ওই ভিডিও প্রকাশের আসতেই বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়েছে বিস্ময় ও সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনাও।

কারও মতে, শিল্পীর ব্যক্তিগত অতীত জানলে গানটির মাহাত্ম্য বদলে যায়। আবার কেউ বলছেন, এতদিন যাকে শিল্পমগ্নতা ভাবা হত, তা নাকি ছিল সম্পূর্ণ অন্য বাস্তব! সেই ভিডিওতে কবীর সুমনকে বলতে শোনা গেল, “আমার তৈরি আধুনিক গান ‘এ তুমি কেমন তুমি’ তো সিনেমার জন্য না! সেই সময় আমার স্ত্রী থাকাকালীনই আমি একজনের প্রেমে পড়েছিলাম এবং রাতের বেলায় আমার স্ত্রী পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছে। আমি তখন যার প্রেমে পড়েছি, তাঁকে টেক্সট করছি। তখনও অ্যান্ড্রয়েড ফোন বেরোয়নি, ওই নকিয়ার একটা ফোন ছিল আমার।

ওই ম্যাসেজ করতে করতেই আমি পুরো গানটা রচনা করলাম, একটা করে লাইন তাকে পাঠিয়ে। সেটা পরবর্তীতে সৃজিত মুখোপাধ্যায় শুনে ফেলে বলে, ও আমার বড় ছেলে তাই এই গানটা ওকে দিতে হবে সিনেমায় ব্যবহারের জন্য। তারপর সুর তৈরি করে সিনেমায় ব্যবহারের করা হলো। এরপরেও ‘খুদার কসম জান আমি ভালোবেসেছি তোমায়’, এইটাও কিন্তু প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা। আমি যখন সুর করে ওটা গাইছি প্রেমিকার জন্য, সৃজিত আবার মাঝখান দিয়ে বলে এটাও ওকে দিতে হবে!

তারপর কথাগুলো সিনেমার মতো করে পাল্টে দিলাম।” এই অংশটুকুই যেন সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতদিন যার সুরে মানুষ প্রেম খুঁজে পেয়েছে, তাঁদের অনেকেই ভাবেননি যে সে গল্পের ভিতর এমন একটি বাস্তব লুকিয়ে আছে। ভিডিওটি সামনে আসার পর সমাজ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার ঝড় শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, শিল্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত নৈতিকতার সম্পর্ক থাকা উচিত নয়, আবার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন শিল্পীর আচরণ নিয়েই। একজনের মন্তব্য, “এ তুমি কেমন তুমি গানটা শুনলেই এখন অন্যরকম লাগবে।”

আরও পড়ুনঃ “হ্যাঁ, বিয়ের জন্য তো ছেলে খুঁজছি…”! অতীতের বৈবাহিক জীবন পেছনে ফেলে এবার কি নতুন জীবনের পথে অভিনেত্রী সোনামণি? সত্যিই কি প্রতীক সেনের সঙ্গে খুব শীঘ্রই সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন তিনি?

অন্যজন লিখেছেন, “শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন তাঁর নিজের, কিন্তু এত খোলাখুলি স্বীকারোক্তি কি সত্যিই জরুরি ছিল?” সব মিলিয়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে কবীর সুমন। কেউ তাঁর সততা প্রশংসা করছেন, কেউ হতভম্ব আর কেউ হয়তো এখনও গানটা আগের মতোই শুনেছেন কারণ কোনও কোনও শিল্পের মূল্য সময়ের সঙ্গেও বদলায় না, তার ব্যাখ্যাও নয়। আপনাদের কী মতামত কবীর সুমনের এই স্বীকারোক্তি নিয়ে? গানটা কি সত্যিই আর আগের মতই শোনা সম্ভব, নাকি এই কথা মনে পড়লে অর্থ পাল্টে যাবে?