সম্প্রতি অভিনেতা ‘টোটা রায়চৌধুরী’র (Tota Roy Chowdhury) নতুন ছবি ‘পুলিশ’ (Police) ২১শে নভেম্বর বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দর্শক প্রতিক্রিয়া ছবিটিকে নিয়ে আরও উৎসাহ বাড়িয়েছে। এই ছবি নিয়ে আলোচনায় আগুন জ্বলেছে ঠিকই, কিন্তু ছবির অ্যাকশনের থেকেও বেশি উত্তেজনা তৈরি করেছে অভিনেতার এক সাক্ষাৎকারের মন্তব্য। তিনি আগেও বহুবার বলেছেন, তিনি সিভিল সার্ভিস জয়েন করতে চান। অভিনয় তার পেশা হলেও, দেশের জন্য যারা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্ত, তাদের নিয়ে আলোচনা তার নেশা। জীবনের বিভিন্ন পর্যায় তিনি বেশ উল্লেখযোগ্য চরিত্র উপহার দিয়েছেন।
কিন্তু অনেকের মতে সেভাবে তাঁর প্রতিভাকে টলিউড কাজে লাগাতে পারেনি এবং অভিনেতা নাকি আজও উপেক্ষিত। যদিও সম্প্রতি বলিউডে অভিষেক হয়েছে তাঁর। তবে, বাংলাতেই তিনি নিজের অভিনয় করতে চান শেষদিন পর্যন্ত। অভিনেতার ভাষায়, “বাংলা ভাষায় যে তৃপ্তিটা আছে, সেটা অন্য কোথাও নেই। আমি যতদিন বাঁচবো বাংলাতেই থাকব আর এখানেই কাজ করব।” এরপরেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, পুলিশ ইউনিফর্ম মানেই কি দুর্নীতি, ক্ষমতার দাপট আর সাধারণ মানুষের ভয়? সব পুলিশ অফিসার কি চোর হয়?
পুলিশ মানেই কি সাধারণ মানুষের জন্য নয়, বরং প্রভাবশালীদের টাকা নিয়ে কাজ করে। রাজনৈতিক দলের তোষামোদ করে? অভিনেতা তখন হাসতে হাসতেই পাল্টা বলেন, বড় হতে হতে তিনি যাঁদের দেখেছেন, তাদের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজও সোজা পথে চলে। ঘুষ নেওয়ার প্রসঙ্গ তো দূরের কথা, ন্যায়ের পথে দাঁড়ানোই তার স্বভাব। তাই তাঁর মতে, কোনও পেশাকেই এককাট্টা রঙে দেখা যায় না। যেমন সাধারণ মানুষ ভালো-মন্দের মিশেল, তেমনই ইউনিফর্মের আড়ালেও থাকে আলাদা আলাদা চরিত্র।
তাঁর নিজের ভাষায়, “দেখো একটা সময় পর্যন্ত আমি নিজেও এই পেশায় আসতে চেয়েছিলাম আর যেসব পুলিশ দেখেছি, তাদের মধ্যে আমার বন্ধু একজন। কোনদিনও নীতি বিরোধি কাজ করেনি, ঘুষ তো দূরের কথা। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে সব সময় সোজা থাকে সে। আর সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, সব পুলিশ যে খারাপ তাও নয়। সব পেশাতেই কমবেশি দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ থাকেই। কাজেই যারা নিজের পেশাকে মহান মনে করে, তাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে ‘তুমি আজ সাধু হয়েছ বাবা, আমি চোর বটে!'”
এই চিন্তাটাই নতুন মাত্রা দিয়েছে ‘পুলিশ’ ছবিটিকে। রাজা চন্দের পরিচালনায় টোটা এখানে ইন্সপেক্টর রণদ্বীপ রায়, যে চরিত্র দুর্নীতি এড়িয়ে নিজের নীতিকে আঁকড়ে ধরে। ছবির অ্যাকশন জমকালো হলেও, কেবল বাহাদুরি নয়– মূল সুরটা কর্তব্য আর বিবেকের টানাপোড়েন। আর বিপরীতে রয়েছে আর.কে. সিং-এর অভিনীত দেবী দাস চৌধুরী। এক প্রভাবশালী মা’ফিয়া, যার সামনে আইন বারবার ভেঙে পড়ে। ছবিটিতে প্রতিটি মুখোমুখি অবস্থান যেন বলতে চায়, ভয় আর ক্ষমতার সামনে থেকেও কিছু মানুষ মাথা নত করে না।
আরও পড়ুনঃ ধিক্কার! ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’র মতো মানসম্মত ধারাবহিককে সরিয়ে নোংরামিতে ভরা ‘চিরসখা’ প্রাইম টাইমে চালানো হচ্ছে! ক্ষোভে ফুঁসছেন দর্শকরা, চ্যানেলের সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনা! প্রশ্ন উঠছে, পারিবারিক বিনোদনের নামে নোংরামির প্রদর্শনী কেন?
টোটা নিজেও জানিয়েছেন, পুলিশের চরিত্রে বহুবার অভিনয় করলেও দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারের ভূমিকা তিনি কখনও নেননি। কারণ, কাছ থেকে দেখেছেন এমন মানুষকে, যাদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা খাটে না। তাঁর কথায়, “সবাই যদি ধরে নেয় পুলিশ মানেই খারাপ, তাহলে যারা সত্যিই নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কাজ করেন, তাদের সম্মান কোথায়?” তিনি আরও যোগ করেন, অন্যান্য পেশার মতো এখানেও অসৎ মানুষ আছে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য গোটা ব্যবস্থাকে দোষারোপ করলে বাস্তবের প্রতি অন্যায় করা হয়।






