স্টার জলসার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে ঘিরে দর্শকমহলে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’কে (Rajeswari Rani Bhabhi) প্রাইম টাইম থেকে সরিয়ে বিকেলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি অনেকের কাছে এক ধরনের অবমাননা বলেই মনে হয়েছে। রাণী ভবানীর জীবন, লড়াই এবং সামাজিক সংস্কারগুলো তুলে ধরা এই ধারাবাহিকটি শুধু বিনোদন নয়, বরং এক টুকরো ইতিহাসের পুনরুজ্জীবন। দীর্ঘদিন ধরে ৮:৩০ এর ধুলো জমা স্লটে বেঙ্গল টপার পর্যন্ত হয়েছিল ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’, তারপরেও টিআরপি একটু কমতেই সেটাকে সরিয়ে ৫:৩০ এ দেওয়া হলো!
এমন একটি ধারাবহিককে কম গুরুত্বপূর্ণ স্লটে সরিয়ে দেওয়াকে অনেকেই ‘অযথা অবমূল্যায়ন’ বলেই দেখছেন। অন্যদিকে, ‘চিরসখা’ (Chiroshokha) ধারাবাহিকটির সম্প্রচার প্রাইম টাইমেই ধরে রাখায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। কারণ দর্শকদের একাংশের মতে, এই ধারাবহিকের প্রতিটি ট্র্যাকেই অযথা অপরাধ, প্রতারণা বা খারাপ মানসিকতা আর নোংরামো দেখানো হচ্ছে, যা বাস্তব সমাজের সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে কেবলমাত্র নাটকীয়তার জন্যই ব্যবহার করছে। বিশেষ করে পর’কীয়া, ষ’ড়যন্ত্র, আ’ত্মহ’ত্যা, মিথ্যা অভিযোগের বিষয়গুলোর সহজীকরণ নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল।
ফলে অনেকে মনে করছেন, মানসম্মত গল্পের বদলে উত্তেজনা তৈরির গল্পেই বেশি ভরসা করছে চ্যানেলটি। প্রসঙ্গত, ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’র দর্শকরা যুক্তি দিচ্ছেন, একটি ঐতিহাসিক ধারাবহিক সমাজকে যেমন পরিচিতি দেয় অতীতের বীরত্ব ও সংস্কৃতির সঙ্গে, তেমনই মানুষকে ইতিবাচক ভাবনাচিন্তায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে। রাণী ভবানীর জীবন, তার ধর্মনিষ্ঠা থেকে প্রশাসনিক বিচক্ষণতা তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারত। কিন্তু সেই ধারাবাহিককে সরিয়ে রেখে এমন একটি ধারাবহিককে প্রাইম টাইমে রাখা, যেখানে বারবার সমাজসংবেদনশীল বিষয় অতিরিক্ত নাটকীয় রূপে দেখানো হচ্ছে!
এতে দর্শকের মনে অবিচারের বোধ তৈরি হয়েছে। সমালোচনার ঢেউ আরও তীব্র হয়েছে সমাজ মাধ্যমে, যেখানে অনেকেই সরাসরি স্টার জলসার ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। কেউ বলছে, ‘প্রচারের সুবিধার জন্য মানহীন ট্র্যাকই যেন এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ অন্যজন বলছে, ‘জনপ্রিয়তা ধরে রাখার নামে নোংরামির প্রদর্শনী বাড়ানো হচ্ছে।’ আবার একাংশ মনে করছেন, ‘পরিবার-উপযোগী গল্প কমে গিয়ে বিতর্ক তৈরির প্রবণতা বাড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে চ্যানেলের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
আরও পড়ুনঃ “আমি স্বীকার করছি আমি মার্ক্সবাদী কিন্তু সিপিএম না! মার্ক্সবাদ কোনও বিশেষ দলীয় পার্টির পৈত্রিক সম্পত্তি নয়” — সিপিএমকে কটাক্ষ করেই কি এই দাবি করলেন কবীর সুমন? এটা কি শুধুই শিল্পীর মতাদর্শ, না কি দলের ভিতরকার বিরোধ?
সব মিলিয়ে বলা যায়, চ্যানেলের স্লট পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত দর্শকদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ তৈরি করেছে। শুধু একটি ধারাবহিককে সরানোর বিষয় নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চ্যানেলের কনটেন্ট বাছাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি, দায়বদ্ধতা এবং দর্শকের অনুভূতিকে সম্মান দেওয়ার প্রশ্ন। ‘রাজরাজেশ্বরী রানী ভবানী’র দর্শকরা এখনও আশা করছেন, চ্যানেল তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেবে এবং মানসম্মত কাজকে প্রাপ্য সম্মান দেবে। তবে বিতর্ক এখনই থামছে না, বরং প্রতিদিন বাড়ছে আর এটাই প্রমাণ করছে যে দর্শকরা এইসবের প্রতি যতটা সংবেদনশীল, চ্যানেলগুলোরও সেই দায়িত্ববোধ আরও বাড়ানো উচিত।






