বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ‘চিরঞ্জিত চক্রবর্তী’র (Chiranjeet Chakraborty) জন্য আজও দর্শকেরা মনে আলাদা জায়গা করে রেখেছেন। একটা সময়ে তিনি যেভাবে রোমান্টিক নায়ক থেকে অ্যাকশন হিরোর ভূমিকাতেই দাপট দেখিয়েছেন, আজও সেই স্মৃতি দর্শকদের কাছে টাটকা। সময় বদলেছে, ধরন পাল্টেছে গল্পের, আজ বড় পর্দার সঙ্গে অভিনেতার খানিক দূরত্ব তৈরি হলেও তাঁর জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। তিনি মাঝে মাঝে পর্দায় হাজির হয়েই বলে দেন যে, অভিনয়ের আবেদন কোনওদিন কমে যায় না।
এদিকে, অভিনয় ছাড়াও রাজনীতিতে তাঁর পথচলা কম উজ্জ্বল নয়। দীর্ঘদিন বারাসাতের বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি অভিনয়ও চালিয়ে গিয়েছেন। এই দুই ক্ষেত্রের ভারসাম্য বজায় রেখে তিনি যে গুরুত্ব পেয়েছেন, তা অনেকের পক্ষেই সহজ ব্যাপার নয়। তবে, সম্প্রতি তাঁর একটি মন্তব্য নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে! অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে বহুদিন ধরেই ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বিশেষণটি ব্যবহার করা হয় আর সেই প্রসঙ্গেই চিরঞ্জিতের বক্তব্য সামনে এসেছে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে এত অভিনেতা একসঙ্গে পরিশ্রম করেছেন, তারপরও কেন শুধু একজনকেই পুরো ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধির মতো দেখা হবে? তাঁর মতে, অনেকের অবদান মিলেই একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়ায়, একজনের জন্য নয়। চিরঞ্জিতের নিজের ভাষায়, “এই তিরিশ বছর বুম্বা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) একা ইন্ডাস্ট্রি টানলে কি মিঠুন, ভিক্টর, থেকে তাপস, অভিষেক আর আমি পার্শ্ব অভিনেতা?” তাঁর এই কথায় স্পষ্ট যে তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের এক প্রকার সমালোচনা করে কথাটা বলেছেন।
অভিনেতার এই মতামত সামনে আসতেই দর্শক থেকে সমাজ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, তাঁর মন্তব্যে দীর্ঘদিনের ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রচারের বিরুদ্ধে একধরনের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। অনেকে আবার লিখেছেন, বাংলা সিনেমার বিভিন্ন সময়ে মিঠুন চক্রবর্তী, তাপস পাল, রঞ্জিত মল্লিক, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা চিরঞ্জিত নিজেও যে অসাধারণ কাজ করেছেন, তা কোনওভাবেই একা কারও ছায়ায় ঢেকে রাখা যায় না। তাদের মতে, বহু অভিনেতার পরিশ্রমেই টলিউড টিকে ছিল এবং সেই অবদানকে ভুলে যাওয়া অন্যায্য।
অন্যদিকে, বেশ কিছুজন আবার আরও সরাসরি বলছেন যে একটা পুরো ইন্ডাস্ট্রি কখনও একজনের হাতে টিকে থাকতে পারে না। যদি এমনটাই দাবি করা হয়, তা হলে সেই যুগের অন্য জনপ্রিয় অভিনেতাদের পরিচয়ই বা কোথায় দাঁড়াবে? একজন এমনও বলছেন, “প্রসেনজিত সুদর্শন ছিলো বলে কিছু রোমান্টিক ছবি ভালো লেগেছে। কিন্তু তার ওই মুখ চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলাটা বিরক্তিকর ছিলো। দেব, জিৎ, কোয়েল, শুভশ্রীর আগে টলিউডে একসময় প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলো।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকে উধাও দিতিপ্রিয়া! ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ছেড়ে হঠাৎ কেন নিজেকে আড়ালে গুটিয়ে ফেললেন অভিনেত্রী?
অনেক রকমের সামাজিক সিনেমায় ভরপুর ছিলো। প্রসেনজিতের একার অবদান কেন হবে ? কায়দা করে সবাই কে সরিয়ে, একচেটিয়া রাজ করে গেছে সে!” অন্যজনের কথায়, “আর যে সময়ের টলিউডকে টানার কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় রঞ্জিত মল্লিক চরিত্রাভিনেতা হয়েই এক একটা ছবির নব্বই শতাংশ টানতেন। সেসব কথা ভুললে হবে কি করে! একজনের উপস্থিতিতে একটা গোটা সিনেমা কখনোই সুপারহিট হয় না।” এসব মন্তব্যই প্রমাণ যে, চিরঞ্জিতের মত শুধু ব্যক্তিগত নয় বরং দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা বহু দর্শকের অভিমতের প্রতিধ্বনি হিসেবেই সামনে এসেছে।






