“বাঙালিরা জীবিত অবস্থায় সম্মান দেয় না, চলে গেলে বলে ‘আহ রে, কি দুর্দান্ত ছিল!'” কাজের স্বীকৃতি, মূল্যায়ন না পাওয়ার আক্ষেপ! বলিউডে প্রশংসা পেলেও নিজের ঘরে ‘উপেক্ষা’র যন্ত্রণা ভুলতে পারছেন না টোটা রায়চৌধুরী!

টলিউডে দীর্ঘদিনের পথচলায় ‘টোটা রায়চৌধুরী’ (Tota Roychowdhury) এমন এক জায়গায় পৌঁছেছেন, যেখানে তাঁকে আলাদা করে পরিচয় করানোর প্রয়োজন পড়ে না। তিনি সবসময়ই নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন আর সেই কাজ কখনও এক জায়গায় থেমে থাকেনি। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি বলিউডেও সম্প্রতি তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছে। হঠাৎ করেই কর্ণ জোহরের ছবিতে অভিনয় তাঁর সামনে নতুন দরজা খুলে দিয়েছে, এটা তিনি নিজেও স্বীকার করেন। তবে এতকিছুর পরেও টোটা নিজের শুরুটা ভুলে যান না, ভুলে যান না সেই মানুষদের যারা তাঁর অভিনয়ের ভিত্তিটা তৈরি করেছিলেন।

প্রভাত রায় আর ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো পরিচালকরা তাঁকে শুধু সুযোগই দেননি, তাঁকে একজন অভিনেতা হিসেবে আরও পরিণত হতে সাহায্য করেছিলেন। টোটা প্রায়ই বলেন, তাঁর তিন দশকের সফরে যতটা এগিয়ে যেতে পেরেছেন তার বড় অংশই এই নির্মাতাদের অবদানে সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি আজও মনে করেন দর্শকদের, কারণ কঠিন সময়ে তাঁদের ভালোবাসাই তাঁকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছে। অভিনেতার স্বীকারোক্তির মধ্যেই যেন ফুটে উঠেছে তাঁর বিনয় আর পেশায় প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা।

তবে তাঁর পথচলা যতটা আনন্দের, ততটাই আক্ষেপও আছে। টোটা মনে করেন, আমরা বাঙালিরা জীবিত মানুষকে সম্মান দিতে কৃপণতা করি। কারও সাফল্যকে অনেকসময় গুরুত্ব দিই তখনই, যখন তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই। এই সত্যিটা তাঁকে কষ্ট দেয়, কারণ তাঁর মনে হয় যে একজন শিল্পীর জীবিত অবস্থায় তার কাজকে শ্রদ্ধা জানানোই প্রকৃত মূল্যায়ন। তাই তিনি বলেছেন, “আমরা বাঙালিরা মানুষকে জীবিত অবস্থায় সম্মান দেই না। চলে গেলে বলি ‘আহ রে, কি দুর্দান্ত ছিল!’ সম্মানটা জীবিত অবস্থায় দিলে তবেই তার মূল্য থাকে।”

এই আক্ষেপটা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পীর কাছ থেকেই এমন কথা শোনা যায়। তবুও তিনি বাংলা সিনেমাই বেছে নিয়েছেন। কারণ তাঁর নিজের ভাষায়, বাংলায় অভিনয় করার যে তৃপ্তি, তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বলিউডে সুযোগ আসছে, কাজও করছেন তিনি কিন্তু তাঁর মনের টানটা রয়ে গেছে বাংলার দিকে। তিনি বিশ্বাস করেন, নিজের মাতৃভাষাতেই তিনি সবচেয়ে সত্যি ভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। তাই ভবিষ্যতেও তিনি বাংলাতেই থাকতে চান।

আরও পড়ুনঃ “মানুষ যত উপরে উঠছে, বাড়ির তলা ততই বাড়ছে আর সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে হচ্ছে!” অকপট রাজা গোস্বামী! ভাঙনের যুগে দাঁড়িয়ে, প্রতিনিয়ত তারকাদের বিচ্ছেদের মাঝে, আরও দৃঢ় হচ্ছে রাজা-মধুবনীর সম্পর্কের ভিত! দম্পতির প্রশংসা নেটপাড়ার!

তিনি তলিউডেই কাজ করতে চান যতদিন সম্ভব। তাঁর এই যাত্রার গল্পটা যেমন সাফল্যে ভরা, তেমনই গভীরে লুকিয়ে আছে নিজেদের মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া কম মূল্যায়নের বেদনা। তবুও টোটা আজও আশাবাদী যে পরিস্থিতি একদিন বদলাবে। তিনি চান তাঁর কাজই কথা বলুক আর দর্শক সেই কাজের মধ্যেই তাঁকে খুঁজে পাক। মানুষের ভালোবাসাই তাঁকে এত দূর এনেছে, সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি আর সেই শক্তি নিয়েই তিনি সামনে হাঁটছেন, নীরবে এবং নিজের মতো করে।