পুণে থেকে জয়া বচ্চনের সঙ্গে পড়াশোনা করেও স্বপ্ন থেকে গিয়েছিল অপূর্ণ! কেউ তাঁকে নায়ক হিসেবে ভাবলোই না! কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ায় আক্ষেপ রত্নার

বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকের ঘনঘটা নেমে এসেছে বাংলা বিনোদন জগতে। তাঁর মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত হয়েছেন অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল। বললেন, গত দু’বছর ধরে আর কথা হয়নি তাঁদের, অথচ কল্যাণদা তাঁর কাছে ছিলেন পরিবারের বড় মানুষের মতো। রবিবার রাতে দীর্ঘ রোগভোগের শেষেই হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা।

রত্না স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানালেন, তাঁদের প্রথম কাজ ছিল যাত্রিকের পরিচালনায় তৈরি ছবি ‘এখানে পিঞ্জর’। সে ছবিতে তাঁরা ভাইবোনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। বাস্তবেও সেই সম্পর্ক বহু বছর ধরে অটুট ছিল। রত্নার কথায়, সে সময়ের ইন্ডাস্ট্রি ছিল একেবারে পরিবারের মতো। শ্যুটিং শেষে আড্ডা, গল্প, হাসিঠাট্টায় ভরে থাকত তাঁদের দিন। এখন নন্দনে যখন পুরনো ছবি চলছে, সেই সব মুহূর্ত আরও বেশি করে মনে পড়ছে তাঁর।

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কথা তুলতেই আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না রত্না। মনে করলেন সেই দিনগুলোর কথা, যখন কল্যাণ, তিনি এবং অন্য সমসাময়িকরা একসঙ্গে ছবি দেখতেন, চায়ের কাপ আর মুড়ির কাগজ হাতে দীর্ঘ আড্ডা দিতেন। কল্যাণদার সরল, মায়াভরা স্বভাব তাঁকে উত্তমকুমার থেকে সত্যজিৎ রায়— সবার প্রিয় করে তুলেছিল। রত্না বললেন, দেখা হলেই তিনি সবার আগে পরিবার আর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতেন, ঠিক বড় দাদার মতো। এই মানবিক দিকটাই তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ।

তবে এত গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনের বড় আফসোস রয়ে গেল। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে জয়া বচ্চনের সঙ্গে চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন কল্যাণ। অসংখ্য বড় পরিচালক, তাবড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলেও কেউ তাঁকে কখনও নায়ক হিসেবে ভাবেননি। সারাজীবন পার্শ্বচরিত্রেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রী রত্না এ নিয়ে তীব্র আক্ষেপ করে বললেন, আমাদের শিল্পজগতে কখনওই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সম্মান ঠিকমতো হয় না।

আরও পড়ুনঃ অভিনেত্রীকে গাড়িতে আটকে গ’ণধ’র্ষ’ণ! অবশেষে গ্রে’ফতার নায়ক সহ অ’ভিযুক্তরা

কল্যাণদার এই ব্যথা রত্না কাছ থেকে দেখেছেন। অভিনেতার নিজেরও কষ্ট ছিল এই অবমূল্যায়ন নিয়ে। পুণে থেকে এত পড়াশোনা, প্রতিভা, অভিজ্ঞতা— কিছুই তাঁকে কেন্দ্রীয় চরিত্র এনে দিতে পারেনি। তবুও তিনি কাজ করে গিয়েছেন নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর নরম ব্যবহার নিয়ে। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর স্মৃতি, তাঁর সরল মানুষটি বাংলার অভিনয় জগতে চিরকাল রয়ে যাবে।