অভিনয়ের জগতে দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ হয়েও আজ ‘তুলিকা বসু’ (Tulika Basu) যেন নিজেকেই নতুন করে আবিষ্কার করছেন। টেলিভিশন থেকে বড় পর্দা, সবখানেই এক সময় সাবলীল যাতায়াত ছিল তাঁর। কিন্তু কাজের ধারাবাহিকতা হঠাৎ করেই থমকে গিয়েছে! ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ শেষ হওয়ার পর বহু দরজায় কড়া নেড়েও প্রত্যাশিত সাড়া পাননি তিনি। বারবার একই যুক্তি, পারিশ্রমিকের অঙ্ক মেলানো যাচ্ছে না! এই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও অভিনয় থেকে সরে দাঁড়াননি তুলিকা, বরং নিজেকে সক্রিয় রাখার পথ খুঁজতে শুরু করেছেন অন্যভাবে।
সেই খোঁজ থেকেই যাত্রাপালায় ফেরার সিদ্ধান্ত। ‘আমার মা আমার নয়’এ মায়ের চরিত্রে তাঁকে এখন নিয়মিত দেখা যাচ্ছে খোলা মঞ্চে। মাঝখানে টেলিভিশনের কাজ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলেও যাত্রাকে তিনি নতুন অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখছেন। ক্যামেরার সামনে কাজের অভ্যাস থাকলেও দর্শকের চোখের সামনে, খোলা মঞ্চে অভিনয় করার উত্তেজনা আলাদা আর এই কথা লুকোন না অভিনেত্রী নিজেও। তাঁর কথায়, এই মাধ্যমে অন্তত অভিনয় চর্চাটা থেমে থাকছে না। সম্প্রতি আবার বড়পর্দায় ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, আরও কিছু নতুন কাজের প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। ফলে অপেক্ষা এখন ভবিষ্যতের দিকেই। কাজের অনিশ্চয়তার মাঝেই তুলিকা সম্প্রতি খোলাখুলি কথা বলেছেন নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও, যার অনেকটাই এতদিন আলোচনার বাইরে ছিল। বিশেষ করে তাঁর বিয়ে এবং সংসার ভাঙার গল্পে উঠে এসেছে একেবারে অন্য তুলিকা! অভিনেত্রী জানিয়েছেন, “তখন আমি ক্লাস টেন, মাধ্যমিক তখনও দিই নি। একজনকে আমার খুব ভালো লাগতো, একটা সম্পর্কও শুরু করার ভাবনা চিন্তাও চলছিল।
সেই সময় যাঁর সঙ্গে আমার বিয়ে হয় তিনি জানতে পারেন যে একটা খারাপ মানুষের সঙ্গে আমি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছি আর তা ছাড়াও তিনি আবার আমায় পছন্দ করতেন। একদিন আমায় বলে যে ওই ছেলেটার সঙ্গে না মিশতে, সে নাকি বাজে। বুদ্ধি করে দু’জনকে একই দিনে ডেকে সামনাসামনি কথা বলিয়ে বুঝতে পারি যে না, উনি ঠিকই বলছিলেন। এরপর আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়, ১৯৯০ সালে বিয়ে হয়। আমার স্বামীর বাবার কাকা ছিলেন নেতাজি। বিয়ের পরে আমরা খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছিলাম। ১৯৯৩ সালে আমাদের ছেলে হয়।
খারাপ থাকাটা শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে, তারপর একটা এমন জায়গায় পৌঁছায় সম্পর্কটা যে বেরিয়ে আসা ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না। ছেলেকে নিয়ে চলে আসি, যদিও ভেবেছিলাম যে উনি এসে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, তবে আর আসেননি। ২০১৩-১৪ নাগাদ উনি ফিরেছিলেন, ওনার সঙ্গে যোগাযোগও ছিল কিন্তু আমিও বুঝতে পারি আর ছেলেও বলে যে, বাবা শারীরিক ভাবে ফিরলেও মানসিক ভাবে ফেরেনি। বুঝেছিলাম, যেই কারণে সংসার ছেড়েছিলাম সেটা আরও বেড়ে গেছে। সত্যি বলতে ছেলেকে নিয়ে ভালো আছি আর ছেলেই সব পরিস্থিতিতে আমায় ঠিক সামলে নেয়।”
আরও পড়ুনঃ “কেউ মুদির দোকান চালিয়েও জীবনে দারুণ সফল হতে পারে, কেউ আবার প্রচুর পড়াশোনা করেও নয়, সবার পরিশ্রমের মূল্য আলাদা”— জীবনে সফল হওয়া নিয়ে অকপট অভিনেতা প্রতীক সেন!
এই কথাগুলোর মধ্যে দিয়েই যেন স্পষ্ট, তাঁর জীবনটা শুধুই রঙিন পর্দার গল্প নয়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া থেকে বিয়ে, অল্প বয়সে সংসারের দায়িত্ব, তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্কের ভাঙন সামলে তিনি একাই ছেলেকে বড় করেছেন। আজ ছেলেই তাঁর সবচেয়ে বড় ভরসা, আবার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণও! ক্যামেরার পেছনের কাজ শিখলেও ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান পরিস্থিতিতে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মায়ের উদ্বেগ বেড়েছে। তবে কাজের অভাব, ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতা, ব্যক্তিগত জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা মিলিয়ে তিনি এখন অনেক বেশি বাস্তববাদী।






