‘মিঠুনদা যাকে ধরবে কাঁদিয়ে ছেড়ে দেবে, আজও কিছু দৃশ্য মনে পড়লে শিউরে উঠি!’ ‘ওনার সঙ্গে কাজ মানে শরীর ও মনকেও প্রস্তুত রাখতে হয়’ অ্যাকশন দৃশ্যে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতি ভাগ করলেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়!

বাংলা সিনেমায় অন্যতম জনপ্রিয় খলনায়ক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় (Sumit Ganguly)। প্রায় দু’দশকের বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয় করেছেন আর সেই বহু সফল ছবিতে নিজের অভিনয় দক্ষতায়, টলিউডে শক্ত অবস্থান তৈরিও করেছেন। তবে সুমিতের অভিনয় জীবনের অপ্রাপ্তি, তিনি বেশ কয়েকবার প্রকাশ করেছেন। ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতে করতে মাঝে মাঝে মনে হতো, তিনি আরও কিছু করতে পারেন কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি তাকে একান্তভাবে ভিলেন হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এরপরও, সুমিত কখনও নিজের দুঃখ বা হতাশাকে তার কাজের মধ্যে আনেননি, বরং তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং শ্রদ্ধা রেখেছেন।

বাংলা ছবির বাণিজ্যিক বাজারে কিছুটা সংকটের কারণে সুমিতের হাতে কাজ কমে গিয়েছে। যদিও তিনি বর্তমানে কয়েকটি ছবিতে আবার প্রস্তাব পাচ্ছেন। তবে সুমিতের অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড় স্মৃতিগুলি আজও তার মনে গভীরভাবে আঁকা। তার মধ্যে অন্যতম, মিঠুন চক্রবর্তীর (Mithun Chakraborty) সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। মিঠুন চক্রবর্তী, যিনি নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন, সুমিতের জন্য এক অসাধারণ সহকর্মী হয়ে ওঠার পাশাপাশি, বিভীষিকা হয়ে উঠেছিলেন! সুমিত নিজেই তাঁর অভিজ্ঞতা সম্প্রতি ভাগ করেছেন।

সম্প্রতি আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে সেবার একটা দৃশ্যের শুটিং করছি, যেখানে আমি ওনাকে মেরে চলে গেলাম, পড়ে উনি আমাকে একই জায়গায় মারবেন। তারপর জামার কলার ধরে আমায় ছুঁড়ে দেবে সামনের দিকে। প্রথমবার উনি ডায়লগটা বলে আর দেখলাম জামাটা ছেড়ে দিলেন, এবার আমি একটা ছোঁয়া না পেলে কি করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো! স্বাভাবিকভাবেই দৃশ্যটা নষ্ট হওয়ায় ডিরেক্টর খুব রেগে গেলেন। আমায় কারণ জিজ্ঞেস করতে আমি বললাম যে দাদা তো একটিও ঠেললেনি তাই আর যেতে পারিনি।

মিঠুনদা একটা গালাগাল দিয়ে বললেন, ‘কলকাতা থেকে এখানে কিসে করে এসেছিস? কোথায় থাকছিস?’ আমি বললাম যে প্লেনে করে এসেছি আর অমুক হোটেলে থাকছি। তারপর বললেন, ‘এতগুলো দিন যে আছো, থাকা খাওয়ার পয়সা লাগছে?’ আমি বললাম না। তখন বলল যে, ‘খাবার খেতে পয়সা দাও না, এই অভিনয়টা করার জন্য তো পয়সা পাবে?’ আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর বললেন, ‘প্লেনে করে এসে এসি রুমে থাকবে, বিনি পয়সায় খাবে, আবার পয়সাও পাবে আর মিঠুন চক্রবর্তী ধাক্কা দেবে তারপরে তুমি গিয়ে পড়বে!

তুমি নিজে যাও!’ সেই মতো পরেরবার শটে আমি নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছি যে নিজেকেই যেতে হবে এবার। এবারে মিঠুনদা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আমাকে ছুড়লেন। প্যাড ছাড়িয়ে বহুদূর নিয়ে পড়লাম, হাত পা কেটে গেল। মিঠুন দা বলছে, ‘ঠিক ছিল তো ঠেলাটা?'” সুমিত আরও একবার মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অ্যাকশন দৃশ্য শুটিং করার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আরও একবার একটা ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিং করছি। উনি আমাকে মারবে উপর থেকে আর আমি গিয়ে কাঁচের উপর পড়ব।

পুরোটা যাতে ভেঙে যায় আমি পড়লে, এমন করেই সবটা তৈরি। সারা শরীরে বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতার জন্য গার্ড লাগানো। ডিরেক্টর স্যার বললেই শুরু করব। ভাবছি কি করে টাইমিং ম্যাচ করাবো। মিঠুনদাকে বললাম যে ঘাড়টা আবার একটু ছুঁয়ে ঠেলে দিতে। এরপর অ্যাকশন বলতেই, হাতটা দিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে মারল আমাকে। ওখানে গিয়ে ভেঙে পড়লাম না, পুরো সব উড়ে গেল চোখের সামনে! সবকিছু কালো হয়ে গেল, তারপর আর আমার কিছু মনে নেই। যখন আমার জ্ঞান ফিরল, তখন আমি মেকআপ রুমে শুয়ে আছি আর ডাক্তার আসছেন হায়দরাবাদ থেকে।

আরও পড়ুনঃ “আমরা সবাই মানুষ, আমাদের মনুষ্যত্ব থাকা দরকার!” দীপু চন্দ্র দাস ও হাদি হ’ত্যায় ধর্মের নামে বিভাজনের বিরুদ্ধে সরব এবার অভিনেত্রী ইধিকা পাল!

তখনও চোখে তারা তারা দেখছি। সবাই আমায় ঘিরে ধরে আছে, জানতে চাইছে ঠিক আছি কিনা। ভয় হচ্ছিল তখন, মরে যাব না তো! পাশ থেকে মিঠুনদা বলছে, ‘সুমিত টাচটা ঠিক ছিল?’ মিঠুনদা যাকে ধরবে না একদম কাঁদিয়ে ছেড়ে দেবে!” এইসব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, সুমিত শুধুমাত্র একজন অভিনেতা হিসেবে নয় বরং একজন মানুষ হিসেবেও যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা পরিষ্কার। মিঠুন চক্রবর্তীর মতো কিংবদন্তির কাছ থেকে শেখার সুযোগ তাকে সৃষ্টিশীলতার এক নতুন স্তরে নিয়ে গিয়েছিল। এভাবেই সুমিতের অভিনয় জীবন, তার মিঠুনদার সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাগুলি আজও তার হৃদয়ে অমলিন স্মৃতি হয়ে আছে।

You cannot copy content of this page