ভালোবাসার গল্প সব সময় পরিকল্পনা মেনে এগোয় না। কখনও তা তৈরি হয় তর্কের ফাঁকে, কখনও আবার হঠাৎ কোনও যাত্রাপথে। বাংলা সঙ্গীতজগতের এই দম্পতির গল্পটাও তেমনই ছকভাঙা, স্বাভাবিক আর ঠিক সেই কারণেই আলাদা করে মনে থেকে যায়। হ্যাঁ, কথা হয় হচ্ছে লোপামুদ্রা মিত্র (Lopamudra Mitra) এবং জয় সরকারকে (Joy Sarkar) নিয়ে। নিয়মকানুনে নিজেকে আটকে রাখতে না চাওয়া এক শিল্পী আর সুরের প্রতি নিখাদ নিষ্ঠায় বিশ্বাসী এক সংগীতশিল্পীর মিলন, যা আজ প্রায় পঁচিশ বছর ধরে একই ছন্দে বয়ে চলেছে।
দুজনের আলাপ হয়েছিল কাজের সূত্রেই। একজন তখন ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত নাম, অন্যজন গানের দুনিয়ায় নিজের জায়গা তৈরি করার পথে। বয়সের ব্যবধান নিয়ে কখনও গম্ভীরতা আসেনি তাঁদের সম্পর্কে। বরং সেই ফারাক নিয়েই হাসিঠাট্টা, খুনসুটি। জয় সরকারের সংগীতবোধ আর বাজনার প্রতি ভালোবাসা লোপামুদ্রা মিত্রকে আকৃষ্ট করেছিল প্রথম থেকেই। আর জয়? তিনি বরাবরই লোপার কণ্ঠ আর গানকে শিল্পী হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। কাজ করতে করতেই সেই শ্রদ্ধা ধীরে ধীরে বদলে যায় নির্ভরতায়।
মজার কথা হল, এই প্রেমের সূচনা হয়েছিল মোটেই রোম্যান্টিক কোনও মুহূর্তে নয়। বরং তর্ক-বিতর্ক থেকেই। কথায় কথায় পাল্টা যুক্তি দেওয়া জয়ের স্বভাব থেকেই নাকি প্রথমে ঝগড়া, পরে বন্ধুত্ব। সেই ঝগড়ার রেশ নাকি আজও রয়ে গেছে, যদিও তা এখন নিছক মজা আর আদরের রূপ নিয়েছে। লোপামুদ্রা জয়ের এই স্বভাবের জন্য তাঁকে ‘ননদ’ বলেন মজা করে! এইসবই তো তাঁদের সম্পর্কের এক চেনা রসদ, যার আড়ালে লুকিয়ে থাকে বহু বছরের বোঝাপড়া।
বিয়ের গল্পটাও ঠিক ততটাই অপ্রথাগত। কোনও বড় আয়োজন, কোনও দীর্ঘ পরিকল্পনা নয়। নর্থ বেঙ্গল থেকে কাজ সেরে ফেরার পথে, চলন্ত ট্রেনেই কথার মাঝে উঠে আসে বিয়ের প্রসঙ্গ। ডায়রি খুলে দেখা হয় সময়, দেখা যায় একই দিনে দুজনেই ফাঁকা! ব্যস, সিদ্ধান্ত হয়ে যায় সেখানেই। সেই দিন সকালে এক জন রেকর্ডিংয়ে, অন্য জন গিটারের ক্লাসে, তারপরই সাধারণভাবে সেরে ফেলা হয় বিয়ে। এই সরলতাই যেন তাঁদের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
আরও পড়ুনঃ ‘সবার বড়দিন আনন্দের হয় না…কেউ কেউ কাঁদে উৎসবের মরশুমেও’, বর্ষশেষের আলোই কি নীরব কষ্ট ঢাকতে পারবে? হঠাৎ কাকে ঘিরে এমন কষ্টের কথা প্রকাশ করলেন স্বস্তিকা?
দীর্ঘ দাম্পত্যে সন্তান না থাকার সিদ্ধান্তও তাঁরা নিয়েছেন সচেতনভাবেই। এই বিষয় নিয়ে কোনও আড়াল নেই তাঁদের কথায়। লোপামুদ্রা একবার বলেছিলেন, তাঁদের সন্তান আসলে ‘তাঁদের গান।’ সুর, স্টেজ, আর শ্রোতাদের সঙ্গেই তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ জুড়ে দেখতে চান। আগামী মাসে তাঁদের দাম্পত্য পা দেবে পঁচিশ বছরে। এত বছর পরেও এই সম্পর্কের কেন্দ্রে রয়ে গেছে পারস্পরিক সম্মান, হাসি আর গান। সেটাই প্রমাণ যে, ভালোবাসা সব সময় জাঁকজমক চায় না, কখনও কখনও শুধু ঠিক সুরটা পেলেই হয়!






