বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ে শেষে নেমে এল গভীর শোকের ছায়া। বহু দশক ধরে যিনি পর্দার ভাষায় মানবজীবনের গল্প লিখে গিয়েছেন, সেই স্বনামধন্য পরিচালক গৌতম ঘোষের (Goutam Ghose) জীবনেও নেমে এসেছে এক নিঃশব্দ অধ্যায়ের সমাপ্তি। নীরবে, যেন কারও কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, জীবনের পর্দা থেকে সরে গেলেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ— স্ত্রী ‘নীলাঞ্জনা ঘোষ’ (Neelanjana Ghose)। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও শনিবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন তিনি।
খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই গভীর শোকের আবহ নেমে আসে সাংস্কৃতিক মহলে। প্রসঙ্গত, গৌতম ঘোষ বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক স্বতন্ত্র নাম। তাঁর নির্মিত ‘অন্তর্জলী যাত্রা’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘আবার অরণ্যে’, কিংবা ‘শঙ্খচিল’— প্রতিটি ছবিই সিনেমাপ্রেমীদের মনে রেখে গিয়েছে এক গভীর ছাপ। পরিচালক হিসেবে তিনি যেমন জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন, তেমনই মানবিকতা আর বাস্তবতার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন প্রতিটি গল্পে।
তাই আজ তাঁর ব্যক্তিগত এই শোক যেন সিনেমা জগতেরই এক বড় ক্ষতি। উল্লেখ্য, গৌতম ঘোষ ও নীলাঞ্জনা ঘোষের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচ দশক আগে, ১৯৭৮ সালে। দীর্ঘ জীবনের পথে তাঁরা একসঙ্গে লড়েছেন, একসঙ্গে হাসিখুশি কাটিয়েছেন বহু বছর। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে। বহুবার পরিচালক নিজের জীবনের গল্পে নীলাঞ্জনার ভূমিকার কথা বলেছেন। তিনি শুধু জীবনসঙ্গিনী নন, গৌতম ঘোষের শিল্পজীবনের এক অমূল্য অনুপ্রেরণা ছিলেন।
তাঁর নিঃস্বার্থ সঙ্গ ও সমর্থন ছাড়া হয়তো এত বড় সাফল্যের পথটা এতটা মসৃণ হতো না। সাংস্কৃতিক মহলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নীলাঞ্জনা ঘোষের প্রয়াণে ব্যথিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নীলাঞ্জনা ঘোষের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “আমার প্রিয় নীলাঞ্জনা ঘোষের মৃ’ত্যুতে আমি শোকগ্রস্ত বোধ করছি। আমার বৌদি, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের স্ত্রী, তিনি একটি কঠিন অস্ত্রোপচারের পর আজ সকালে প্রয়াত হন।”
আরও পড়ুনঃ “জীবনের প্রথম প্রেম কখনও ভোলা যায় না, আমিও পারিনি, কিন্তু শিখেছি অনেক কিছু!”— ‘চিরসখা’র ‘পার্বতী’তে নিজেকেই খুঁজে পেলেন কমলিকা ব্যানার্জি! বাস্তবের ব্যথা কি ছায়া ফেলেছে চরিত্রেও? জানেন কে ছিলেন অভিনেত্রীর প্রথম প্রেমিক?
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, নীলাঞ্জনার সঙ্গে তাঁর ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তিনি ছিলেন খুবই প্রতিভাবান মানুষ, যিনি সমাজসেবার ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর হাতের কাঁথাশিল্পের কাজ ছিল অসাধারণ— সেই শিল্পভাবনা আর স্নেহময় ব্যক্তিত্বই আজ সকলের মনে রয়ে গেল স্মৃতির পাতায়। এছাড়াও বহু সহকর্মী এবং বিনোদন জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।