বাংলা লোকসঙ্গীতের জাদু কখনও ম্লান হয় না, আজও গ্রামবাংলায় কিংবা শহুরে মঞ্চে সেই সুর ছড়িয়ে পড়ে সমানভাবে। এমনকি এখন বাংলার লোকসংগীত বলিউডের হাত ধরে জাতীয় স্তরেও পৌঁছে গেছে। তবে এমন এক কণ্ঠ একসময় ঝড় তুলেছিল, যাঁর লোকসংগীত আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে— তিনি ‘স্বপ্না চক্রবর্তী’ (Swapna Chakraborty)। ‘বড়লোকের বিটি লো’ কিংবা ‘বলি ও ননদী’, এই গানে আজও মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। অথচ আজ সেই কণ্ঠশিল্পীর দিন কাটছে বড় কষ্টে!
মাত্র সাত বছর বয়স থেকে সংগীতচর্চা শুরু করেছিলেন স্বপ্না। পরে বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনে পাঁচ বছর ধরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বড় শিল্পীদের কাছ থেকে তালিম নিয়ে নিজের কণ্ঠকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলেছিল। শুধু বাংলায় নয়, তাঁর কণ্ঠ পৌঁছে গিয়েছিল সীমান্তের ওপারেও। আশির দশকে গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠানের ডাক পড়ত একের পর এক। একদিনে কখনও তিনটে পর্যন্ত অনুষ্ঠান গাইতে হতো তাঁকে। মানুষজন তাঁকে ছুঁয়ে দেখত, অবাক হয়ে বলত, “এ তো আসলে মানুষ!”
এতখানি জনপ্রিয়তা সেই সময় খুব কম শিল্পীরই ভাগ্যে জুটেছিল। এত সাফল্যের পরেও যেন জনপ্রিয়তার আলো কোথাও হারিয়ে গেছে, আর সেই শিল্পীই আজ স্মৃতির ভিড়ে বড্ড একা হয়ে গেছেন। স্বপ্না চক্রবর্তীর গান এতটাই সুপারহিট হয়েছিল যে, এক সময়ে কিংবদন্তী লতা মঙ্গেশকর পর্যন্ত অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলেন, কে এই মেয়ে যার ক্যাসেট তাঁর থেকেও বেশি বিক্রি হচ্ছে! শুধু দেখা নয়, লতাজীর সঙ্গে মঞ্চও ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি।
এমনকি মহম্মদ রফি, মান্না দে, ভূপেন হাজারিকা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের সঙ্গে গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। বীরভূমের সিউড়ির মেয়েটির জন্য এই অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই গর্বের। লোকগানের তিনিই প্রথম আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছিলেন। তবে, আজ তাঁর আক্ষেপের সুর স্পষ্ট। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কখনও সরকারি সম্মান পাননি সেভাবে। যে শিল্পীকে একসময় মানুষ হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইত, তিনি আজ যেন অবহেলিত।
গান দিয়ে তৈরি করেছিলেন অগণিত ভক্ত, অথচ বর্তমানে দিন কাটে বড় কষ্টে। কোনো রকম সরকারি সাহায্য ছাড়াই অভাবে দিন চলছে তাঁর। স্বপ্না দেবীর কথায়, “রেশনের চালেই তো চলে যাচ্ছে, কিছু চাই না।” প্রয়োজন মত চিকিৎসা করানোর অর্থও নেই এখন। দুবেলা ঠিকমত খেতে পেলেন কিনা, সেটাও খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। প্রবীণ এই শিল্পীর অবস্থা এতই খারাপ যে, পাশে দাঁড়াতে কেউ এগিয়ে আসেন না।
আরও পড়ুনঃ “দিন আনে দিন খাওয়া মানুষটাও একদিন আমার হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন!” “ট্র্যাফিক পুলিশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধান, সবার কাছে যেন পৌঁছাতে পারি!”— ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তির নবজাগরণের গল্প!
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।