“আমি মানুষ, পেটে যা সইবে তাই খাব!” ‘বি’ফ স্টেক’ খেয়ে ফের বিতর্কে স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়! ‘হিন্দু ব্রাহ্মণ হয়েও গরুর মাংস খাচ্ছেন!’ ‘স্বামীকে প্রতা’রক বানানো দিয়ে শুরু, নিজেকে আলোচনায় রাখার চেষ্টায় একের পর এক বিতর্ক তৈরি করছে’ চূড়ান্ত সমালোচনা নেটিজেনদের!

সামাজিক মাধ্যমে কদিন ধরে তুমুল আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন অভিনেত্রী ও উদ্যোক্তা ‘স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়’ (Swaralipi Chatterjee)। শুরুতে কারণটা তাঁর অভিনয় বা ব্যক্তিগত জীবনের পুরোনো টানাপোড়েন হলেও, এখন আর সেটা নয় বরং একটিমাত্র ছবি! শীতের আমেজে গোয়ায় ছুটি কাটাতে গিয়ে তিনি ‘বি’ফ স্টেক’ বা গ’রুর মাং’স খাচ্ছেন, এই দৃশ্যটাই অনেকে যেন মেনে নিতে পারলেন না। ছবিটি পোস্ট হওয়ার পর থেকেই তাঁর কমেন্ট বক্সে ঝড়ে পড়ে অভিযোগ, তিরস্কার আর অশ্রাব্য ভাষা।

কেউ জাত-ধর্ম টেনে আক্রমণ করেছেন, কেউ আবার অকথ্য গালা’গাল দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। কিন্তু এইসবে চুপ করে বসে থাকেননি স্বরলিপিও! তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল একান্তই সরল ও সোজাসাপ্টা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, খাবার কি সত্যিই জাত-ধর্ম দেখে বেছে নেওয়া উচিত? তিনি জানান, তিনি একজন মানুষ এবং মানুষ হিসেবে পেট যা সহ্য করে তাই খাবেন। তাঁর নিজের কথায়, “আমি মানুষ, পেটে যা সইবে তাই খাবো! খাবারের আবার জাত কী?”

তাঁর এই অবস্থানকে ঘিরেই নতুন করে বিতর্ক চাঙা হয়েছে। একদিকে তাঁর পোস্টে অপমানজনক মন্তব্যের পাহাড়, অন্যদিকে তিনি নিজেই সেই মন্তব্যগুলোর স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে এনে দেখিয়ে দিয়েছেন, কী রকম অযৌক্তিক আক্রমণের মুখে তাঁকে পড়তে হচ্ছে তাঁকে! সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে একজন কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘হিন্দু ব্রাহ্মণ হয়ে গরুর মাংস খাচ্ছেন কী করে!’ অন্যজন মৃ’ত্যু কামনা করেছেন, ‘আপনাদের মতো মানুষ মরে যায় না কেন!’

এই ছবিটি পোস্ট করে স্বরালিপি লিখেছেন, “খুব খারাপ সময়ের গন্ধ পাচ্ছি!” খাবার নিয়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তও জনতার রোষের কারণ হয়ে উঠছে, এটা তিনি কোনও ভাবেই মানতে পারছেন না। কিন্তু বিষয়টা শুধু খাওয়ারে যে আর আটকে নেই! এটা এখন ধর্মীয় ভাবাবেগের একটা অংশ আর স্বরলিপি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে তার কাছ থেকে এমনটা আশা করেনি অনেকেই। প্রসঙ্গত, ময়দানে গীতাপাঠের দিনে চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মারধরের পর এই ঘটনায় পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল হয়ে উঠেছে।

হিন্দু-মুসলিম বিতর্কের আবহেই স্বরলিপির বি’ফ পোস্ট যেন আরও বড় বিতর্কের জন্ম দিল। উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক অবশ্য তাঁর নতুন নয়। দীর্ঘ লিভ-ইন সম্পর্ক, পরবর্তীতে বিবাহ, সবই তাঁকে কোনও না কোনও সময় আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন নিজের কষ্ট, অপমান আর একার সংগ্রামের কথা। সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ, প্রতিআরোপ চললেও স্বরলিপি এখন নিজের মেয়ে সহ নতুন করে জীবন গড়ার চেষ্টায় আছেন।

আরও পড়ুনঃ ধারাবাহিকে কাজ বড্ড একঘেয়ে! হয়ে ওঠে, শারীরিক, মানসিক ক্লান্তির কারণ! একটানা কাজের ক্লান্তি পেরিয়ে আবার কোন টানে ছোটপর্দায় ফিরলেন ইন্দ্রাণী দত্ত?

অতীত অধ্যায়গুলো ভুলিয়ে দিতে চাইলেও বিতর্ক যেন তাঁকে এত সহজে ছাড়ে না। তবে নিজের অবস্থানে তিনি অটল। এ ধরনের ট্রো’লিং বা গালাগালিকে তিনি ভয় পান না বলেই জানিয়েছেন। বরং তাঁর কথায়, কারও প্রত্যাশা বা ধর্মীয় পরিচয় নয়, নিজের পছন্দের ভিত্তিতেই তিনি জীবনযাপন করবেন। আর সেই পছন্দের মধ্যেই যদি বি’ফ স্টেক থাকে, তবু তা নিয়ে কারও অনুমতির প্রয়োজন তিনি দেখেন না। এই দৃঢ় অবস্থানই হয়তো তাঁকে ঘিরে বিতর্ক বাড়িয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি তুলেছেন একটি প্রশ্ন যে স্বাধীন দেশের নাগরিকের পাতে কী থাকবে তা ঠিক করবে কে?