বাংলা সিনেমা ও ধারাবাহিকের জগতে সময়ের সাথে সাথে গল্পের ধরন বদলেছে। আগে পারিবারিক আবেগ, সম্পর্কের বন্ধন, মায়া ও টান–সবই ছিল সিনেমার মূল আকর্ষণ। আজকের ছবি ও ধারাবাহিকে বেশি করে দেখা যায় ভিন্ন ধারার ছবি করার প্রতিযোগিতা। সিনেমাগুলিতে পারিবারিক ও বাঙালিয়ানার ছোঁয়া ক্রমশ কমে এসেছে। দর্শকরা এখনো সেই অতীত গল্পের মাধুর্য মনে রাখেন, যেখানে চরিত্রের সম্পর্কের গভীরতা এবং অনুভূতির প্রতিফলন ছিল চোখে পড়ার মতো।
অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক বাংলা বিনোদন জগতের একজন আইকন। দশকের পর দশক ধরে তিনি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, বিশেষ করে দাপুটে পুলিশ অফিসার, প্রেমিক, বাবা—প্রতিটি চরিত্রে তিনি বাঙালির মন ছুঁয়ে গেছেন। শুধু অভিনয়ই নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের মান ও ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় রঞ্জিত মল্লিকের অবদান অসামান্য। দর্শকরা তাকে কেবল অভিনেতা নয়, বাংলা পরিবারের গল্পের ধারক হিসেবেও মনে করেন।
পরিচালক অন্নপূর্ণা বসুর ছবি ‘স্বার্থপর’-এ ১৬ বছর পর বাবা-মেয়ে একসঙ্গে পর্দায় ফিরেছেন। রঞ্জিত মল্লিক এবার দাপুটে পুলিশ নয়, আইনজীবীর চরিত্রে। তার মেয়ে কোয়েল মল্লিককে তিনি আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন। এই নতুন রূপে অভিনয় করতে পেরে আনন্দিত হলেও রঞ্জিতবাবুর মুখে আছে আক্ষেপ— “বাংলা ছবি হচ্ছে, ব্যবসাও করছে, কিন্তু বাঙালিয়ানা কোথায়?”
রঞ্জিত মল্লিকের মতে, আজকের চলচ্চিত্রে বাঙালির ঘরের অভ্যন্তরের গল্প হারিয়ে যাচ্ছে। পুরোনো দিনে গল্পে ছিল মায়া, সম্পর্কের টান, এবং জীবনের রসায়ন। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “আমাদের ভবানীপুরের মল্লিকবাড়িতে ২০০ জন একসঙ্গে থাকত। মতবিরোধ হতো, কিন্তু আদালতে যেত না। কারণ ছিল ভরসা ও সহনশীলতা।”
আরও পড়ুনঃ “যা কমলিনীর উচিৎ ছিল, কুর্চি সেটাই করে দেখালো!” “পার্বতীর মুখোশ খুলে দিল কুর্চি, বন্ধনের থেকে বিবেকই বড়!”— ‘চিরসখা’য় কুর্চির অভিনয় মন ছুঁয়েছে সবার! কমলিনীর নীরবতায় ক্ষুব্ধ, কুর্চির সাহসে উচ্ছ্বসিত দর্শকের মতে সে-ই আসল নায়িকা!
‘স্বার্থপর’-এ সেই হারানো আবেগের ছোঁয়া ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “ভাই-বোনের সম্পর্ক যখন আদালতে পৌঁছয়, সেটা খুব বেদনাদায়ক।” রঞ্জিতবাবু প্রার্থনা করেন, “সব দাদা-বোন যেন বিশ্বাস আর ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে বাঁচে।” এই ছবির মাধ্যমে তিনি শুধু অভিনয়ই করেন নি, বরং বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য এবং পারিবারিক মূল্যবোধকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা করছেন।