টেলিভিশনের পর্দায় যাঁকে দেখে সবসময় প্রাণবন্ত মনে হয়, সেই সঙ্ঘশ্রী সিনহা মিত্রের (Sanghasri Sinha Mitra) হাসির অন্তরালে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ। নিজের কথা স্পষ্টভাবে বলা, এই স্বভাবটিই তাঁকে বারবার সমস্যায় এনে ফেলেছে। এদিকে পর্দার উজ্জ্বলতার আড়ালে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কখনও ঝড় থামেনি। মালদার ছোট্ট শহর থেকে তিনি যে জায়গায় আজ পৌঁছেছেন, তার পিছনে আছে অসংখ্য অন্ধকার দিন আর গভীর মানসিক টানাপোড়েন।
অভিনয়ে আসার বহু আগে থেকেই এক সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে ছিলেন সঙ্ঘশ্রী। শুরু থেকেই বুঝেছিলেন সব ঠিকঠাক চলছে না, তবু বেরিয়ে আসতে তাঁর সময় লেগেছিল প্রায় সাত বছরেরও বেশি। শারীরিক-মানসিক নির্যাতনে ভরা সেই সময়টাকে আজও তিনি নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় বলে মনে করেন। যখন কলকাতায় পড়াশোনা আর অভিনয়ের টানে তিনি চলে এলেন, তখন সেই মানুষটিও চাকরির বদলি করিয়ে একই শহরে এসে উঠলেন, শুধু তাঁকে নজরে রাখার জন্য।
এই নিয়ন্ত্রণ আর অপমানের চাপই তাঁকে ভিতর থেকে ভেঙে দিচ্ছিল। অভিনেত্রীর কথায়, নিয়মিত অত্যাচারের সঙ্গে, সেই ব্যক্তি যখন তখন চড় মেরে দিতেন! সঙ্ঘশ্রী তবু কাউকে দোষ দেন না। বরং মনে করেন, এত বছর সম্পর্কটায় থেকে যাওয়াটাই তাঁর ভুল ছিল। পরে তিনি জানতে পারেন, তাঁদের বিচ্ছেদের পর সেই মানুষটির নেশাজনিত সমস্যা আরও বেড়ে যায়। করোনার সময় অতিরিক্ত নেশার কারণে তাঁর শরীর একসময় আর সইতে পারেনি। জন্ডিসের শিকার হয়ে সারা শরীরের অঙ্গ বিকল হয়ে যায় তাঁর।
এই খবর জানার পর সঙ্ঘশ্রীর মন ভারী হয়ে ওঠে, কারণ কারও পতনের গল্প শুনে খুশি হওয়ার মানুষ তিনি নন।দীর্ঘ সম্পর্কে আঘাত পাওয়ার পর আচমকাই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন, যদিও মনের ভিতরে সন্দেহ ছিল। শুধুমাত্র প্রাক্তন একজন নতুন বান্ধবী বানিয়েছে বলে, তিনি বিয়ে করে দেখাতে চেয়েছিলেন। মা বরাবর প্রেম বিরোধী, তাই পছন্দ করা পাত্র রোহন মিত্রকে বিয়ে করেন সঙ্ঘশ্রী। মায়ের ইচ্ছায় হওয়া সেই বিয়ের পরদিনই তাঁর মনে হয়েছিল বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভালো।
আরও পড়ুনঃ টিআরপিতে ফের দাপট স্টার জলসার! শীর্ষে ‘পরশুরাম’, পাল্লা দিয়ে চমক দেখাল ‘বিদ্যা ব্যানার্জি’ও! আরও নীচে নেমে এলো ‘পরিণীতা’, শেষের মুখে নিশ্চিহ্ন ‘জগদ্ধাত্রী’! ডিসেম্বরের শুরুতেই টিআরপি যুদ্ধ জমজমাট!
কিন্তু স্বামীর কথায় তখন আরেকটি সুযোগ দিতে মন চায়। রোহন সেদিন সঙ্ঘশ্রীকে বলেছিলেন, বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ হলে ফিরতে, অথচ সেই দিন আর আসেনি। ধীরে ধীরে তিনি বুঝেছেন, যোগ্য কেউ পাশে থাকলে নতুন করে শুরু করা অসম্ভব নয়। আজ সঙ্ঘশ্রী নিজের সংসারে স্থির। অতীতের প্রতিটি অভিজ্ঞতা তাঁকে শক্ত হতে শিখিয়েছে। তিনি জানেন, যেসব অন্ধকার পথ একসময় তাঁকে গ্রাস করেছিল, সেগুলোই আজ তাঁর সাহসের পরিচয়।






