উত্তম-সুচিত্রার যুগের রত্ন! বাংলা সিনেমার ব্যস্ততম ক্যারেক্টার আর্টিস্ট! আজ ভাঙা বাড়িতে, আর্থিক দুরবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন বর্ষীয়ান নিমাই ঘোষ

বাংলা চলচ্চিত্রের এক অচেনা রত্ন ‘নিমাই ঘোষ’ (Nimai Ghosh), যাঁর অভিনয় আমরা দেখেছি বারবার, অথচ নামটি মনে রাখিনি। ক্যারেক্টার আর্টিস্টদের (Extra Artist) নিয়ে সিনে-দুনিয়ায় একটা প্রচলিত কথা আছে—তাঁদের কাজ দেখা হয়, কিন্তু নামটা কখনও আলোচনার কেন্দ্রে আসে না। নিমাই ঘোষের জীবন যেন সেই কথারই প্রতিচ্ছবি। আজও তাঁর নাম বললেই অনেকেই সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার নিমাই ঘোষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।

অথচ এই মানুষটি পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ২০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন। ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’-এ আবীর চট্টোপাধ্যায়ের পাশে থাকা সেই বৃদ্ধ মানুষটিকে মনে পড়ে? কিংবা ‘বব বিশ্বাস’-এ অভিষেক বচ্চনের চরিত্রের হাতে চড় খাওয়া সেই বৃদ্ধকে? অথবা ‘তীরন্দাজ শবর’-এর সেই মাতাল, যে রাস্তার মাঝখানে নাচছিল? তাঁরা সবাই আসলে একই মানুষ—নিমাই ঘোষ। অথচ আমাদের কজন তাঁর নাম জানি? আমরা কেবল চরিত্রগুলো মনে রেখেছি, অভিনেতাকে নয়।

তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ‘দামু’, ‘চোখ’, ‘পাতালঘর’, ‘স্পন্দন’, ‘কাঁটাতার’, ‘চার’, ‘পিস হেভেন’-এর মতো সিনেমা। মৃণাল সেন, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দীপ রায়ের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন, অভিনয় করেছেন ওম পুরীর সঙ্গে। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিক ‘জন্মভূমি’-তেও তাঁকে দেখা গেছে। এমনকি, কিছুদিন আগেও ZEE5 Originals-এর ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’-তে অভিনয় করেছেন তিনি।কিন্তু এতকিছুর পরেও কেউ তাঁকে চেনে না।

কেউ তাঁর খবর রাখে না। তরুণ বয়সে দাক্ষিণেশ্বরের কাছে একটি স্টুডিওতে উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘সাঁঝের প্রদীপ’ ছবির শুটিং দেখার পর থেকেই নিমাই ঘোষের চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তিনি টালিগঞ্জে ঘুরে ঘুরে কাজের সন্ধান করতেন এবং অবশেষে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান, যদিও সেই ছবি মুক্তি পায়নি। পরবর্তীতে থিয়েটারে যোগ দিয়ে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন এবং সেখান থেকে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন।

আরও পড়ুনঃ “মাকে আর মনে পড়ে না!” ‘তোমার সন্তানকে ভূমিষ্ঠ হয়ে বড় হতে দাও তারপর তারও তোমাকে মনে পড়বে না, তবেই বুঝবে মায়ের কষ্ট’, অহনাকে কটাক্ষ নেট পাড়ার

এসেছিলেন, শিশির ভাদুড়ির হাত ধরে যাঁর প্রথম অভিনয় শেখা, আজ সেই মানুষটি এক সরকারি আবাসনের ছোট্ট এক ডাম্প ধরা আলো বাতাসহীন কামরার ঘরে দিন কাটাচ্ছেন। কাজের সুযোগ কমেছে, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ারও ঠিক নেই। দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিদিন যুদ্ধ করেন তিনি, অথচ বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ তাঁকে নিয়ে কোনও আলোচনাই করে না। নিমাই ঘোষ আজও আছেন, কিন্তু আমরা কি সত্যিই তাঁকে ‘দেখি’?