পরিচালক ‘কিউ’ (Director Q) আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে, তবে এইবার তিনি সরাসরি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’কে (Rabindranath Tagore) ঘিরে সমাজের চিরাচরিত ধারণা নিয়ে। বহুদিন ধরেই একটা ধারণা প্রচলিত যে, কিউ বুঝি রবীন্দ্রনাথকে অপছন্দ করেন। যদিও তিনি নিজেই জানালেন, এই ভুল ধারণার পেছনে আছে তাঁর ‘আইকনোক্লাস্ট’ (Iconoclast) মানসিকতা, অর্থাৎ প্রথা ভাঙার সাহস। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি বা ভাবনাকে প্রশ্ন করার মানেই যে অপমান নয়, সেটা বোঝাতে গিয়ে কিউ বলেন, “রবীন্দ্রনাথের ভাবমূর্তি যেভাবে মাথায় করে রাখা হয়েছে, সেটাই পরিস্থিতিকে আরও বিষাক্ত করে তুলেছে।”
‘তাসের দেশ’ নিয়ে কিউ-এর বিরোধিতা নতুন নয়, তবে এই কাজে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি আজও গর্বিত। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় থাকলেও, তিনি বরাবরই খুঁজেছেন স্বাধীনতার তাগিদ। কিউ জানালেন,” ‘তাসের দেশ’ কোনও রকম গীতিনাট্য বা নৃত্যনাট্য নয়, বরং এটি রবীন্দ্রনাথের এক ব্যতিক্রমী পরীক্ষা যেখানে কৌতুক আর ব্যঙ্গ দিয়ে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।” পরিচালকের মতে, চিরাচরিত রবীন্দ্রচর্চা আবেগের উপর দাঁড়িয়ে, বাস্তব চর্চা নয়।
তিনি বলেন,”আজকের দিনে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবি বলা অপ্রাসঙ্গিক। তিনি নিজের সময় সেই মর্যাদা পেয়েছিলেন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করে, কিন্তু এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে।” কিউ মনে করেন, “আজকের প্রজন্ম প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে চললেও, কিছু মানুষ এখনও অতীত আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। তারাই বারবার রবীন্দ্রনাথকে দেবতার আসনে বসিয়ে, সমালোচনার সুযোগ করে দেন না। অথচ রবীন্দ্রনাথ নিজেও ‘কল্লোল’ পত্রিকার কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কখনও তাতে আপত্তি জানাননি।
আজকের দিনে কেউ যদি মূলস্রোতের বিপরীতে কথা বলেন, তাঁকে রে-রে করে আক্রমণ করা হয়।” কিউ প্রশ্ন তোলেন,”তবে কি সত্যিই আমরা রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাকে বুঝতে পেরেছি?” ব্যক্তিগতভাবে কিউ নিজেকে বারবার মূলধারার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মনে করেন, যাঁরা রবীন্দ্রনাথের নামে একচেটিয়া ভালোবাসার দাবি করেন, অনেক সময় তারাই আবার অন্য বিষয়ে অধৈর্য। তাঁর মতে, “রবীন্দ্রবিরোধিতা মানেই সে রবীন্দ্রবিদ্বেষ করছে না, বরং তাঁকে নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করছে।”
পরিচালক স্বীকার করেন, রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়া যায় না, ঠিক যেভাবে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে বাদ দিয়ে লাতিন সাহিত্য ভাবা যায় না, সেভাবেই রবীন্দ্রনাথও প্রয়োজনীয়। কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে প্রেমেন্দ্র মিত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকলেই যে স্বাধীনতার কথা বলেছেন তাকে রাষ্ট্রের জন্য নয়, ব্যক্তির চেতনা স্বাধীনতাই বলেছেন। কিন্তু যেভাবে বাঙালি প্রাত্যহিক দিনের খাদ্যের সাথে রবীন্দ্রনাথকে গুলিয়ে ফেলেছেন, সেটার বিরোধিতাই তিনি আজীবন করবেন।
আরও পড়ুনঃ ‘সন্তানের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল’— দ্বিতীয় স্টেজ ক্যানসারে আক্রান্ত দীপিকা, জানালেন নিজেই!
সবশেষে কিউ স্পষ্ট করে দেন, রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য কোনও লেখা নিয়ে তাঁর কাজ করার ইচ্ছা নেই। তাঁর একমাত্র আগ্রহ রবীন্দ্রনাথের স্বাধীনতার বার্তায়। তাঁর মতে, শান্তির স্বপ্ন দেখালেই হবে না, বাস্তবে পরিবর্তন আনতে হলে মনের মধ্যে বিরোধিতা করার শক্তি থাকতে হয়, যেটা রবীন্দ্রনাথের মধ্যেই ছিল। তাই কিউর কাছে রবীন্দ্রনাথ চিরকালই প্রাসঙ্গিক, কিন্তু তাঁকে আবেগে নয়, যুক্তিতে ও স্বাধীন দৃষ্টিতে দেখতে শিখতে হবে।