মায়ের ভোগে গঙ্গা-পদ্মার ইলিশ থেকে পাঁঠার মাংস, কাজরী মাছের চচ্চড়ি! সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোর অজানা গল্প

বাঙালির পুজোর উৎসব শুরু হয়ে গেছে। আগে অবশ্য পঞ্চমী, ষষ্ঠী থেকে ঠাকুর দর্শন শুরু হতো। কিন্তু বর্তমানে পুজো এগিয়ে গেছে।‌ এখন একেবারে মহালয়া থেকেই ঠাকুর দেখা শুরু করে দেন বাঙালি। দুর্গাপূজা থেকে এই উৎসবের শুরু হয় তার শেষ হবে কার্তিক পুজোয়। আর পুজোর এই মরশুমে আনন্দে মাতোয়ারা থাকে এই সমাজ।

তবে শুধুমাত্র যে বারোয়ারির পুজো হয় তা নয়, বহু বাড়িতেও ধুমধাম করে আয়োজিত হয় দুর্গাপুজো। আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। আজও বহু বনেদি বাড়িতে সাবেকি দুর্গা পুজোর আয়োজন হয়। আর সেই রকমই এক পুজোর আয়োজন করা হয় বাংলার জনপ্রিয় সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। রান্নাঘর সঞ্চালনার সৌজন্যে তার জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। এছাড়াও বেশ কিছু ধারাবাহিকেও কাজ করতে দেখা গেছে তাকে।

সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় একজন সফল পরিচালক এবং প্রযোজক। আর প্রত্যেক বছরই অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো হয় মহা ধুমধামে। টলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে নেতা-মন্ত্রী চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে রীতিমতো তারকার মেলা বসে। বহুদিনের এই পুজো।‌ তবে কলকাতায় এই বছর বয়স বেশি দিন নয়। ‌

জানা যায়, অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। আর সেখানেই আরাধনা হতো মায়ের। প্রায় ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পুজো হত। কিন্তু বিগত ৯ বছর ধরে অগ্নিদেব ও সুদীপার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কলকাতাতেই শুরু হয়েছে এই পুজো। মায়ের এই পুজো ঘিরে বিশেষ কিছু আচার নিয়ম রয়েছে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে।

মায়ের ভোগের জন্যেও রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম। বরাদ্দ রয়েছে বিশেষ কিছু খাবার। সুদীপা চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পুজোর সময়ে তাদের গৃহে মা অন্ন এবং আমিষ আহার গ্রহণ করেন। অষ্টমীর সন্ধিপুজোর পর থেকেই মাংস আর নানা রকমের মাছের পদ দেওয়া হয়। গঙ্গা ও পদ্মার ইলিশ থাকে মায়ের ভোগে। চালেও থাকে বৈচিত্র্য। এক একদিন এক এক রকম চালে ভোগ দেওয়া হয় মাকে। রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি, গোবিন্দভোগ, এ ছা়ড়া ঢাকা থেকে আনানো হয় বিশেষ চিনিগুড়া চাল। নবমীতে মাকে দেওয়া হয় পদ্মার ইলিশ আর দশমীর দিন গঙ্গার ইলিশ খেয়ে মা বিদায় নেন।

মায়ের ইলিশ খাওয়ার পর আর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ইলিশ মাছ আসে না। একেবারে আবার সরস্বতী পুজোতে ইলিশ মাছ রান্না হয়। এছাড়াও এই বাড়িতে মায়ের পুজোর ভোগে কাজরী মাছের চচ্চড়ি আলাদা আকর্ষণ। এমনকি পাঁঠার মাংস মাকে ভোগ হিসেবে দেওয়ায় যাতে মাংসের কোন‌ও গন্ধ না থাকে আর যাতে সুগন্ধ বের হয়ে সেই জন্য গোবিন্দভোগ চাল বাটা দেওয়া হয়। এছাড়াও সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোয় মা দুর্গাকে কোনরকম ছানার মিষ্টি নয়, বরং ক্ষীরের মিষ্টি ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়।