মাতৃভাষা সঙ্কটে! সবার আগে নিজের সন্তানকে বাংলা ভাষা শেখাবো, অকপট পরমব্রত

ইংরেজি শেখাই কি আসল বুদ্ধিমত্তা? মাতৃভাষাকে ভুলে যাচ্ছে শহুরে প্রজন্ম- মাতৃভাষা দিবসে প্রশ্ন? বিনোদন জগত কি বাংলা ভাষাকে সত্যিই গুরুত্ব দেয়?

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকতরা। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দিনটি শুধুমাত্র বাংলাভাষীদের জন্য নয়, বরং বিশ্বের প্রতিটি ভাষাপ্রেমীর কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এত বছর পরও, বাংলা কি সমানভাবে টিকে আছে? নাকি নতুন প্রজন্মের কাছে তা কেবলই ঐতিহাসিক স্মৃতি?

বর্তমানে বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। বিশেষত শহুরে প্রজন্মের মধ্যে ইংরেজি ও হিন্দির প্রতি ঝোঁক বেশি দেখা যাচ্ছে। অভিভাবকরাও সন্তানদের মাতৃভাষার পরিবর্তে ইংরেজিতে কথা বলতে শেখাচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে বাংলার অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। শুধু কথাবার্তা নয়, লেখার ক্ষেত্রেও মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা স্পষ্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অনেকেই বাংলা শব্দের পরিবর্তে ইংরেজি ও হিন্দি শব্দ ব্যবহার করছেন। শিক্ষকদের মতে, শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্যাকরণের প্রতি আগ্রহ কমছে, যা ভাষার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার বিষয়।

বাংলা সাহিত্যের উপরও ভাষার এই অবহেলার প্রভাব পড়েছে। একসময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এখন তরুণ প্রজন্ম বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি বা বিদেশি সাহিত্য পড়তে বেশি আগ্রহী। বাংলা কবিতা বা গল্প পড়ার আগ্রহও কমছে।
বিনোদন জগতেও পরিবর্তন এসেছে। বাংলা সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের সংলাপে ইংরেজি ও হিন্দি শব্দের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, বাংলা ভাষার মৌলিকত্ব বজায় রাখতে হলে বিনোদনের মাধ্যমেও বিশুদ্ধ বাংলা ব্যবহারে জোর দেওয়া উচিত।

বাংলা ভাষার গুরুত্ব নিয়ে অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মাতৃভাষার গুরুত্ব সবাইকে বোঝানো দরকার। আমরা যদি বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করি, তাহলে ভবিষ্যতে এই ভাষা সংকটের মুখে পড়বে।” অভিনেতা আদৃত রায় বলেন, “আমাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। বাংলা সিনেমা ও সাহিত্যকে বাঁচাতে হলে মাতৃভাষার প্রচার বাড়াতে হবে।”
অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, “যদি আমরা নিজেরাই বাংলাকে অবহেলা করি, তাহলে ভবিষ্যতে এই ভাষার অস্তিত্ব থাকবে না। বাংলা সাহিত্য ও বিনোদনের মাধ্যমেই ভাষার প্রসার ঘটানো সম্ভব।” অন্যান্য শিল্পীরাও মনে করেন, বাংলা ভাষার প্রচারে আরও উদ্যোগী হতে হবে। সিনেমা, নাটক ও ওয়েব সিরিজে বাংলার বিশুদ্ধ ব্যবহারে জোর দিতে হবে। এতে নতুন প্রজন্ম বাংলা চর্চায় আগ্রহী হবে।

আরও পড়ুনঃ এক বেলা কোনমতে খাবার জোটে তো অন্য বেলা জোটে না, মানুষ খুব অত্যাচার করে! কষ্টে রয়েছেন রানু মন্ডল

তাহলে কি বাংলা ভাষা সংকটের মুখে? একমাত্র পরিবার থেকেই মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা সম্ভব। প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত, শিশুকে ছোট থেকেই বাংলায় কথা বলতে শেখানো। ইংরেজি শেখা প্রয়োজন, তবে মাতৃভাষা ভুলে যাওয়া কখনোই উচিত নয়। বাংলা ভাষা রক্ষা করতে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু মাতৃভাষা দিবস পালন করলেই চলবে না, প্রতিদিনই বাংলা ভাষাকে সম্মান জানাতে হবে। কারণ ভাষা হারালে সংস্কৃতি হারাবে, আর সংস্কৃতি হারালে জাতির অস্তিত্বও প্রশ্নের মুখে পড়বে।