বাংলা গানের দুনিয়ায় এক অনন্য নাম, ‘শুভমিতা ব্যানার্জি’ (Subhamita Banerjee)। তাঁর কণ্ঠে মিশে থাকে আধুনিকতার ছোঁয়া, আবার মিশে থাকে শুদ্ধ সংগীতের আবেশ। নব্বইয়ের দশকে যেভাবে আধুনিক বাংলা গানের ঘরানাকে তিনি রঙিন করে তুলেছিলেন, তা আজও শ্রোতাদের মনে দাগ কেটে আছে। ক্লাসিক্যাল থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, প্রতিটি ঘরানায় তাঁর অবাধ যাতায়াত তাঁকে শিল্পী হিসেবে আরও অনন্য করে তোলে। ছবির গানেও তাঁর কণ্ঠ একাধিকবার ব্যবহার করেছেন পরিচালকেরা, যা জনপ্রিয়তার আরেকটি মাপকাঠি।
রিয়্যালিটি শো থেকে নিজের সঙ্গীতযাত্রা শুরু করলেও, বর্তমান সময়ের রিয়্যালিটি সংস্কৃতি নিয়ে বেশ সচেতন শুভমিতা। তিনি মনে করেন, আজকের প্রজন্মের অনেক শিল্পীর মধ্যেই গায়কসুলভ পরিশ্রম বা সাধনার অভাব রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ডেডিকেশন ও রেওয়াজের ঘাটতি স্পষ্ট। শুধুমাত্র স্টেজ শো আর গান গাওয়ার প্রবণতা এতটাই বেড়েছে, যে নিজের শেখার সময়টাই আর বের করতে পারছে না অনেকে। নিজের ক্ষেত্রে সংযম নীতিতেই বিশ্বাসী শুভমিতা।
একটানা স্টেজ শো তিনি কোনওদিনই পছন্দ করেন না। তাঁর মতে, গান মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দ যদি নিজেই না পান, তবে শ্রোতাকে দেবেন কীভাবে? অর্থ উপার্জন হোক বা কেরিয়ার গঠন—সবকিছুর চেয়েও বেশি প্রাধান্য পান আত্মতৃপ্তি। গান গাওয়া কেবল পেশা নয়, তাঁর কাছে এটি এক ধরনের সাধনা। তাই মাঝেমাঝেই নিজেকে সময় দিয়ে আবার মঞ্চে ফেরেন তিনি। রিয়্যালিটি শো নিয়ে তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য, “এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিভা উঠলেও, টিকে থাকার লড়াইটা অন্য জিনিস।
শুধু বিজয়ী হলেই সব শেষ নয়, বরং শেখার প্রক্রিয়া তখনই শুরু হয়। রেওয়াজ, তালিম, অধ্যবসায়—এই উপাদানগুলো না থাকলে, কোনও শিল্পী দীর্ঘমেয়াদে নিজের জায়গা তৈরি করতে পারবেন না।” তিনি মনে করেন, আজকালকার অনেক প্রতিযোগীই ভাবেন জেতার মানেই শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অথচ প্রকৃত শিক্ষা, মনন আর পরিবেশের প্রভাব ছাড়া শিল্পী হওয়া যায় না।
আরও পড়ুনঃ সন্তানের মৃ’ত্যুতেও শুটিং করেন বিশ্বনাথ! পেশার দায়ে থেমে থাকেনি শোক! জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়েও পেশাদার থাকেন অভিনেতা! জানেন কী ঘটে অভিনেতার সঙ্গে?
সবশেষে তিনি নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশে বার্তা দেন,”প্রতি মাসে নতুন গান না করলেও চলে। একটা গান যদি মন ছুঁয়ে যায়, তাহলে শ্রোতারা নিজেরাই খুঁজে নিয়ে আসবে শিল্পীকে। শিল্পের প্রতি ভালোবাসা আর নিষ্ঠা থাকলে, জনপ্রিয়তার লোভে ছুটতে হয় না।” শুভমিতা ব্যানার্জির এই দৃষ্টিভঙ্গি আজকের উচ্ছল সময়ে যেন এক পরিশুদ্ধ বাতাস, যা শুধু সংগীত নয়, শিল্পচর্চার পরিপূর্ণ মূল্যবোধের কথাও মনে করিয়ে দেয়।