বাংলা গানের জগতে বর্তমানে এক প্রতিষ্ঠিত এবং শক্তিশালী নাম ‘ইমন চক্রবর্তী’ (Iman Chakraborty)। লোকগান, আধুনিক গান কিংবা রবীন্দ্রসঙ্গীত–যে ধরণের গানই হোক না কেন, তাঁর গলায় যেন এক অন্যরকম আন্তরিকতা মিশে থাকে। মিউজিক ভিডিও থেকে ছবির প্লে-ব্যাক, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর সুরের জাদু শ্রোতাদের মনে গভীর ছাপ ফেলে যায়। সুরের সঙ্গে তাঁর যে আত্মিক যোগাযোগ, তা প্রতিটি গানে ধরা পড়ে নিঃশব্দে। এই অসাধারণ প্রতিভার জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার সহ একাধিক সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন।
তবে শুধু শিল্পী হিসেবেই নয়, জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘সা রে গা মা পা’-এর বিচারকের আসনে বসেও তিনি দর্শকদের মন জয় করেছেন সহজ অথচ স্পষ্ট মেজাজে। তবে, ইমনের জীবন শুধু মঞ্চে আলো কিংবা ক্যামেরার ঝলকানিতেই আটকে নেই। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সমান সাহসী ও স্পষ্টভাষী। সম্প্রতি তাঁর ও তাঁর স্বামী সুরকার নীলাঞ্জন ঘোষকে ঘিরে কিছু ভুয়ো খবর রটে। সেখানে নীলাঞ্জনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়। এসব গুজব রটে যাওয়ার পর ইমন নিজেই সামাজিক মাধ্যমে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
এসব অসত্য কথার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। একজন শিল্পী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই ইমন দেখিয়ে দেন– মিথ্যের সঙ্গে আপস নয়। ফের কিছুদিন কাটতে না কাটতেই সমাজ মাধ্যমে সম্প্রতি ইমন একটি পোস্ট করেন, যা বেশ নাড়া দিয়ে যায় অনেককেই। গতকাল ছিল দশমীর দিন, বাঙালির মন খারাপের দিনে। এদিনেই ইমন লেখেন, “বিয়ের পর থেকে একবারও ‘মা’কে বরণ করতে পারলাম না!” অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেননি তিনি কেন এমন বলছেন।
পরে বোঝা যায়, প্রতিবছর কোনো না কোনো ব্যক্তিগত কারণ আর কাজের সূত্রে শহরের বাইরে থাকার জন্যই বিয়ের পর থেকে তিনি কখনও দুর্গাপুজোর দশমীর সিঁদুর খেলায় বা সধবা বেশে উমাকে বরণে অংশ নিতে পারেননি। এই পোস্টে অনেকেই সহানুভূতি জানিয়েছেন, কেউ বলেছেন, “মন খারাপ করবেন না। গান দিয়েই মা এর আহ্বান, আর বরণ করুন। বিজয়ার অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই!” আবার কেউ লিখেছেন, “মা নিশ্চয়ই একদিন আপনার মনের স্বপ্ন পূরণ করে দেবেন। মা যে মমতাময়ী, মা কি পারে তাঁর সন্তানের মন থেকে দূরে থাকতে?”
উল্লেখ্য, ইমনকে যারা কাছ থেকে চেনেন, তারা জানেন– গানই তাঁর জীবনের প্রথম ভালোবাসা। তাই পুজোর সময়েও তিনি আনন্দকে পাশে রেখে স্টেজে দাঁড়িয়েছেন। দুর্গাপুজোর মতো উৎসবেও ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ কিংবা কলকাতার বাইরের শহরে অনুষ্ঠান করতে দেখা গেছে তাঁকে। এটা কেবল প্রফেশনালিজম নয়, বরং গান নিয়ে তাঁর যে দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। অনেকেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পুজোয় কাজ বন্ধ রাখেন, কিন্তু ইমন সেই পথে হাঁটেননি। নিজের কাজকেই তিনি পরিবারের চেয়েও বড় দায়িত্ব হিসেবে দেখেছেন বহুবার।
আরও পড়ুনঃ “সবাই ঠিক থাকলে তো পৃথিবী চলবে না…ভগবান আছেন!”— বিয়ের এক বছরেই পৌষমিতার স্বামীর মৃ’ত্যু! ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে একা, তবু ভরসার জোরে বেঁচে রয়েছেন তিনি! অভিনেত্রী শোনালেন একাকিত্বের গল্প!
তবে, তার মানে এই নয় যে তিনি ভেতরে ভাঙেন না বা অনুভূতিহীন। একজন শিল্পী হিসাবে নয়, একজন স্ত্রী, একজন মেয়ে বা একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেও তাঁর কিছু না-পাওয়ার ব্যথা রয়ে যায়। সেটাই যেন বেরিয়ে এসেছে তাঁর পোস্টে। কখনও কখনও ব্যস্ততার ভিড়ে থেকেও কিছু অনুভব মনের মধ্যে জায়গা করে নেয়। ইমনের মতো একজন খোলা মন-মেজাজের শিল্পীর এই কথাই প্রমাণ, একজন শিল্পীর জীবন শুধু সাফল্য আর পুরস্কারেই গড়া নয়, তার মধ্যেও থেকে যায় কিছু অপূর্ণতা, কিছু না-পাওয়া।