সমাজমাধ্যম আজ তারকাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়েছে। আগে যেখানে বড়পর্দার অভিনেতাকে সামনে দেখতে হলে হলে গিয়ে অপেক্ষা করতে হত, এখন এক ক্লিকে জানা যায় তাঁদের অবস্থান, কাজ এবং ব্যক্তিগত মুহূর্তও। আর সেই কারণেই অনেক সময়ে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয় তারকাদের। সম্প্রতি অভিনেতা যিশু সেনগুপ্তের একটি পুরনো ভিডিও নতুন করে ভাইরাল হয়েছে, যা ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা।
ভিডিয়োটি সম্ভবত কয়েক মাস আগের। সূত্রের খবর, বর্ধমানের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন যিশু। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই তাঁকে দেখতে ভিড় জমে যায়। সাধারণ মানুষের ভিড় মানেই সেখানে উত্তেজনা থাকে, কিন্তু সেই দিন পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনা ছাড়িয়ে বিশৃঙ্খলায় পৌঁছে যায়। যিশুকে ঘিরে ধরে চারদিক থেকে মোবাইল ক্যামেরা এগিয়ে আসে, সেলফির জন্য টানাটানি শুরু হয়। নিরাপত্তার বেষ্টনীও প্রায় ভেঙে পড়ে। ঠিক সেই সময়ই মেজাজ হারান অভিনেতা।
ভিডিয়োতে দেখা যায়, ভিড় ঠেলে তিনি বিরক্ত স্বরে বলতে শুরু করেন, “সবাই পিছিয়ে যান। পিছিয়ে যান। প্রত্যেকেই দেখতে এসেছেন, সবাইকেই দেখা যাবে। কিন্তু আগে একটু পিছিয়ে দাঁড়ান।” তাঁর চোখেমুখে তখন স্পষ্ট বিরক্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই মুহূর্তে শুরু হয় কটাক্ষের ঢেউ। এক জন লেখেন, “মানুষের অহঙ্কার বেশি দিন থাকে না।” আরেক জনের মন্তব্য, “তারকা হয়ে কী হবে, আচরণে বিনয় নেই।” অনেকে বারবার একই কথাই বলতে থাকেন—তিনি কি ভুলে গেছেন দর্শকদের জন্যই তাঁর আজকের অবস্থান?
তবে সমালোচনার মাঝেই অন্য সুরও শুনতে পাওয়া গেছে। অনেকেই বলছেন, অযথা সমালোচনার আগে পরিস্থিতি বোঝা উচিত। একজন লেখেন, “মানুষ হিসেবে ভিড় সামলাতে গিয়ে রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। নিরাপত্তা না থাকলে কেন এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করা হল?” আরেক জনের মন্তব্য, “তারকারাও মানুষ। তাদেরও ব্যক্তিগত সীমা, শ্বাস নেওয়ার জায়গা দরকার।” কিছু নেটিজেন আবার প্রশ্ন তুলেছেন, অনুষ্ঠানের আয়োজকদের গাফিলতিই কি এর জন্য দায়ী?
আরও পড়ুনঃ ইধিকার পথেই দেবাদৃতা! ছোটপর্দার গন্ডি পেরিয়ে এবার বড়পর্দায় নিজের জায়গা তৈরি করতে চলেছে ‘মিঠিঝোরা’-র নীলু ওরফে দেবাদৃতা বসু!
কর্মজীবন নিয়ে এই মুহূর্তে যিশু বেশ ব্যস্ত। বাংলা ছবির পাশাপাশি হিন্দি ওয়েব সিরিজ, দক্ষিণী সিনেমা—সব জায়গাতেই সমান দক্ষতায় কাজ করে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেছেন অভিনেতা, সঙ্গে রয়েছেন সৌরভ দাস। নতুন কাজের পরিকল্পনা চলছে জোরকদমে। তবে পেশাগত সাফল্যের মাঝেও এই ঘটনা তাঁকে বিব্রত করেছে কি না সে বিষয়ে মুখ খোলেননি যিশু। প্রশ্ন উঠছে, জনপ্রিয়তার চাপ কি কখনও কখনও অসহ্য হয়ে ওঠে? একজন তারকার ব্যক্তিগত সীমা কোথায় শেষ হয় আর ভক্তদের অধিকার কোথায় শুরু হয়—এই পুরনো বিতর্কই আবার ফিরে এল।
শেষ পর্যন্ত এক কথাই সত্যি, ক্যামেরার সামনে তারা সেলিব্রিটি, কিন্তু বাস্তবে তারা-ও মানুষ। আবেগ হারিয়ে ফেলতে পারেন, বিরক্ত হতে পারেন। সমালোচনা করা সহজ, বোঝা কঠিন। এই ভিডিও যেন সেই কথাটাই আবার মনে করিয়ে দিল।