অর্থের জন্য ভিজতে হয়েছিল বৃষ্টিতে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃ’ত্যুর আগে কালী ব্যানার্জির শেষ দিনগুলি ছিল বিভীষিকাময়!

একটা সময় ছিল, যখন রেডিও খুললেই শোনা যেত ‘কার ভালো’, ‘বরযাত্রী’, কিংবা ‘লৌহ কপাট’-এর গান। কলকাতার সিনেমা হলগুলো তখন দর্শকে উপচে পড়ত। টিকিটের জন্য লম্বা লাইন, পাড়ায় পাড়ায় তারকাদের নিয়ে চর্চা—এসব ছিল বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের অঙ্গ। সেই সময়ের বহু মুখ আজ বিস্মৃতির আড়ালে। তেমনই একজন ছিলেন কালী ব্যানার্জি, যাঁর অভিনয় দেখে এক সময় চোখ আটকে যেত বাঙালির।

নায়কের জৌলুশ ছিল না তাঁর মুখে, তবু প্রতিটি চরিত্রে এমন প্রাণ ঢেলেছিলেন যে দর্শক ভুলতে পারেননি কখনোই। কখনো স্কুল মাস্টার, কখনো গ্রামের সহজ-সরল লোক—সব রকম চরিত্রেই সাবলীল ছিলেন তিনি। তাঁর গলার টান, চোখের অভিব্যক্তি আর সংলাপ বলার ধরন তাঁকে আলাদা করেছিল সমসাময়িকদের থেকে। অথচ সেই কালী ব্যানার্জির ব্যক্তিগত জীবন ছিল কাহিল। পেছনে ছিল না বড় কোনও ব্যাকআপ, সামনে ছিল শুধু অভিনয়ের প্রতি একনিষ্ঠতা।

বলা হয়, ১০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করা এই অভিনেতা নিজের জন্য কিছুই জমিয়ে রাখতে পারেননি। তাঁর জীবন ছিল সাধারণ, খরচ কম, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য কোনও নিরাপত্তা ছিল না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের সুযোগ কমতে থাকে। তবে তিনি থামেননি। চরিত্রের গুরুত্ব না দেখেই তিনি অভিনয় করে গেছেন শুধু সংসার চালানোর জন্য। একসময় স্মৃতিলোপে ভুগতে শুরু করেন, আর তখনই সিনেমার জগৎ যেন তাঁকে দূরে ঠেলে দেয়। ডায়লগ মনে রাখতে না পারায় অনেক পরিচালক তাঁকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।

Kali Banerjee, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেতা , Uttam Kumar, উত্তম কুমার, রঞ্জিত মল্লিক, Ranjit Mullick, শত্রু, অঞ্জন চৌধুরী

যখন তিনি সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছিলেন, তখন অনেক সহকর্মী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু অঞ্জন চৌধুরী সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। জীবনের শেষদিকে তিনি যে চরিত্রই পেয়েছেন, সবই লুফে নিয়েছেন। কারণ, অভিনয়ই ছিল তাঁর বাঁচার শেষ সম্বল। তাঁর শেষ ছবি ‘তান্ত্রিক’-এ বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। কিন্তু চিকিৎসার খরচ ততদিনে তাঁর সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে শরীর ভেঙে পড়ে, আর শেষমেশ লড়াই থেমে যায়।

আরও পড়ুনঃ এইবারের টিআরপিতেও অদ্বিতীয় অবস্থান ‘জগদ্ধাত্রী’র! স্টার জলসার দুরন্ত কামব্যাক! সেরা পাঁচে উঠে এলো ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’!

৫ জুলাই ১৯৯৩ সালে, কলকাতার এক কোণে নিঃশব্দে মৃত্যুবরণ করেন কালী ব্যানার্জি। বাংলা সিনেমা হারায় এক নিঃস্ব অথচ গৌরবময় অভিনেতাকে। তাঁর প্রয়াণে কোনও জাঁকজমকপূর্ণ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হয়নি, সংবাদপত্রেও খুব বেশি লেখালেখি হয়নি। কিন্তু আজও যাঁরা বাংলা সিনেমার ক্লাসিক ছবিগুলো ভালোবাসেন, তাঁরা জানেন—এই মানুষটা ছিলেন এক অমূল্য রত্ন। তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায় মনে করিয়ে দেয়, শিল্পীর জীবনে প্রতিভা থাকলেও সম্মান আর নিরাপত্তা সবসময় সমানভাবে মেলে না।