ট্রেন্ডসেটার হতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ বিপদে পড়ে যায়। ‘মধুবনী গোস্বামী’ (Madhubani Goswami) বোধহয় সেরকমই কিছু একটা করে ফেলেছেন! এমনিতেও বেশ কয়েকদিন ধরে সমাজ মাধ্যমে বিতর্কিত (Social Media Controversy) মন্তব্যের কারণে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর এক পোস্টে তিনি এমন দাবি করলেন, যা শুনে নেটদুনিয়ায় অনেকেই রেগে আগুন। বললেন, মোটা শাঁখা পরার চল তিনি শুরু করেছেন! ২০১৬-য় তাঁর বিয়েতে তিনি যে মোটা শাঁখা পরেছিলেন, সেটাই নাকি হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকের ফ্যাশন! দিদিমার আমল থেকে শাঁখা-পলা বাঙালি বিবাহিত নারীর প্রতীক, সেই ইতিহাসকে মুছে দিয়ে নিজেকে ‘আইকনিক’ বানাতে গিয়ে বিপদেই পড়েছেন অভিনেত্রী।
কথাটার ধরণ এমন, যেন তাঁর বিয়ের আগে বাঙালি সমাজে কেউ শাঁখা পরেইনি! শুধু তাই নয়, মধুবনী এবার একধাপ এগিয়ে গিয়ে ধর্মীয় ব্যাখ্যায় ঢুকিয়ে দিলেন ‘উচিত’ শব্দটাকে। তিনি বললেন, শাঁখা-পলা, সিঁদুর এসব পরতে হলে ‘স্বামীর শরীরে থাকা’ আবশ্যক। নেটিজেনরা তো এতে রীতিমতো রেগে আগুন! মানে বিয়ের পর যদি স্বামী মারা যান, স্ত্রী আর শাঁখা-পলা পরতে পারবেন না? আধুনিক নারী হয়েও এই কথা কেমন করে মুখ থেকে বেরিয়ে এল তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। এই ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে এমন মতবাদ করতে পারেন? কেউ বলছেন, মধুবনী এখনও ‘সতীদাহ’র যুগে আটকে আছেন!
অনেকেই বলেছেন,”সবাই চাইলেও পরতে পারে না কেন? শাঁখা-পলা দিয়ে আজকাল অনেক গহনা হচ্ছে সেগুলো সবাই পরতে পারে! শাঁখা-পলাতে কারুর পেটেন্ট বসানো নেই।” আবার একজন বলেছেন,”পার্সপেক্টিভ বললে ‘উচিত’ কথা আসেনা! আপনি উচিত অনুচিত বলার কেউ নন! আপনার ভালো লাগে , আপনি পড়ুন, আপনার বিশ্বাস আপনি মানুন! অযথা উচিত বলে লোকের মনে আপনার বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেবেন না!” অন্যজনের বক্তব্য,”আমি এবং আমার মা দুজনেই যখন বিবাহিত ছিলাম, ঠিক এমন করেই মোটা শাঁখা পরতাম। সুতরাং চলটা আপনি এনেছেন, এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা!”
কেউ তো কটাক্ষের সুযোগও ছাড়েননি,”স্বামীর দেহে থাকা জরুরি মানে তাঁর বেঁচে থাকা। আপনি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এত শাস্ত্র এত আধুনিক বুলি আওড়ে এই ধরনের মন্তব্য করেন কী করে! স্বামীর দেহে থাকা তাঁর না থাকার জন্য কি স্ত্রী রা দায়ী নাকি? যাঁরা পরেন না বেশ করেন! কাউকে খু’ন তো করছেন না! যে দেশে প্রতিদিন এত এত খু’ন, ধ’র্ষ’ণ, হয়ে যায় সেখানে তাঁদের নিয়ে কথা না বলে শাঁখা পলা নিয়ে মেয়েদের জাজ করতে লজ্জা লাগে না! আপনি শাঁখা পলা পরবেন বা চুলে রং করবেন সেটা যেমন আপনার চয়েস অন্যের চয়েসকেও সম্মান করতে শিখুন। আপনি তাঁদের জাজ করার কেউ নন।”
একটা বিশ্বাস থাকা ভালো। কেউ যদি সত্যিই মনে করেন শাঁখা-পলা স্বামীর মঙ্গল কামনার প্রতীক, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস। কিন্তু সেই বিশ্বাসকে ‘উচিত’ বলে চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যে কোথাও যেন একরকম ‘অহংকার’ কাজ করছে। কেউ পরেন না, সেটাকে “গাঁইয়া লাগে ভেবে পরেন না” বলে কটাক্ষ করা যায় নাকি? এত কিছু বলার পরেও মধুবনী নিজের ‘চুল রং করা অবস্থায় শাঁখা পরা’কে এক বিরাট বিপ্লব মনে করছেন! এ যেন নিজেকেই কুর্নিশ করার মতো ঘটনা! আসলে নিজেকে “আধুনিকতা আর সংস্কারের সেতুবন্ধন” প্রমাণ করতে গিয়েই হেরে গেলেন তিনি নিজের যুক্তির কাছে।
আরও পড়ুনঃ ‘চ্যাঙমুড়ি কানী’ মনসার চরিত্রে ঘষা লেন্সে চোখ ঢাকতেন! জ্যান্ত সাপ নিয়ে পর্দায় ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি! বাঙালির জীবন্ত মনসা সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠার গল্প জানেন? জানলে চমকে যাবেন আপনিও!
এখনকার যুগে যেখানে সবাই নিজের পছন্দমতো পোশাক-আভূষণ পরতে চায়, সেখানে একজন পাবলিক ফিগার হয়ে কাউকে ‘উচিত-অনুচিত’ শেখানোটা কতটা শোভন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বহু মানুষ। সব শেষে বলতেই হয়—নিজের বিশ্বাস রাখতে সমস্যা নেই, সেটা নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু যখন সেই বিশ্বাসকে একমাত্র পথ বলে মনে করানো হয়, তখন তা প্রশ্নের মুখে পড়ে। মধুবনী যদি সত্যিই স্টাইলের মাধ্যমে সংস্কারকে তুলে ধরতে চান, তবে তার আগে নিজের কথা গুলোতে নজর দেওয়া উচিত। না হলে ট্রেন্ডসেটার হবেন তো দূর, ট্রোলসেটার হয়ে উঠবেন—আর ঠিক সেটাই এখন হয়ে গিয়েছে!
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।