নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী—দুই ভূমিকাতেই যিনি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে চলেছেন অবিরাম, তিনি ‘মালবিকা সেন’ (Malabika Sen)। দীর্ঘদিন ধরে কুচিপুড়ি এবং ভরতনাট্যমের মতো ক্লাসিকাল নৃত্যে তাঁর পারদর্শিতা তাঁকে নিয়ে গিয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও। তাঁর মতে, নৃত্য শুধু শারীরিক অভিব্যক্তির প্রকাশ নয়, বরং আত্মার সঙ্গে এক গভীর সংযোগ। তাই মঞ্চে নৃত্যের মাধ্যমে নিজের সত্তাকে যেন নতুনভাবে খুঁজে পান তিনি। বহু নামী আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন এই বহুমুখী প্রতিভাময়ী।
শুধু নৃত্যে নয়, অভিনয় জগতেও মালবিকার উপস্থিতি যথেষ্ট লক্ষণীয়। এক সময়ে তিনি মহালয়ায় দুর্গা হয়েছিলেন। তারপর স্টার জলসায় ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘ফাগুন বউ’, ‘শ্রীময়ী’, ‘গুড্ডি’ থেকে শুরু করে এখন ‘চিরসখা’—প্রতিটি ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় দর্শক মনে দাগ কাটার মতো। বিশেষত তিনি শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী, স্পষ্টবাদী মহিলা চরিত্রেই অভিনয় করে দর্শকদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেন। তিনি এমন চরিত্রগুলিকে জীবন্ত করে তোলেন, যা দর্শকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে।
অনেকে বিশ্বাস করেন, হয়তো বাস্তব জীবনেও মালবিকা এমনই কঠোর এবং দৃঢ়চরিত্রের অধিকারী। তবে জানলে অবাক হবেন, বাস্তবের মালবিকা অনেকটাই আলাদা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিত্বের ভিন্ন রূপ তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, তিনি বাস্তবে অত্যন্ত শান্ত, সংযত এবং সংবেদনশীল প্রকৃতির। সংলাপে যদি অন্য কাউকে আঘাত করার মতো কথা থাকে, তবে সেটা বলতে তাঁর মন সায় দেয় না। বরং দৃশ্যের শেষে তিনি সহ-অভিনেতাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। এমন মানবিকতা এবং আন্তরিকতা খুব কম অভিনেতার মধ্যেই দেখা যায়।
তাঁর নিজের কথায়, “আমি পর্দায় কঠিন চরিত্র করলেও, আসলে কাউকে কষ্ট দেবো এই কথা ভাবতেও পারি না। যদি কখনও ভুল করেও কিছু বলে ফেলি, তারপর সারাদিন সেই অনুশোচনায় ভুগি। আমি স্ক্রীপ্ট দেখেই না করে দেই, এমন কথা মুখ থেকে বেরোবে না বলে। সহ অভিনেতারা জোড় করেই ওই সংলাপগুলো বলায়!” মালবিকার এই সহজ-সরল মানসিকতা এবং আন্তরিকতা তাঁকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। অভিনয় জগতে যেখানে কঠোরতা ও উচ্চারণের দৃঢ়তা জরুরি, সেখানে মালবিকা মননে নরম অথচ উপস্থিতি শক্তিশালী।
আরও পড়ুনঃ টলিউডে শোকের ছায়া! বাংলা ইন্ডাস্ট্রির আরও এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন! চলে গেলেন অভিনেতা নীলাদ্রি লাহিড়ী! পিতৃহারা অভিনেত্রী সম্পূর্ণা লাহিড়ী
এই বিরল সমন্বয়েই তিনি হয়ে উঠেছেন সকলের থেকে আলাদা। সব মিলিয়ে, মালবিকা সেন এমন এক শিল্পী যিনি শুধু তাঁর নৃত্য বা অভিনয়ের জন্য নয়, বরং তাঁর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংবেদনশীল চিন্তাভাবনার জন্যও প্রশংসিত। তিনি প্রমাণ করেছেন যে দৃঢ়চরিত্রের নারী মানেই কঠোর নন—তাঁদের হৃদয়েও থাকে মমতা, নম্রতা এবং ভালোবাসা। মালবিকা যেমন পর্দায় সাবলীল, তেমনই বাস্তব জীবনেও একজন অনন্য নারী, যাঁর শিল্পীসত্তা আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা।