বছরের পর বছর ধরে ছোটপর্দা ও বড়পর্দায় নিজের অভিনয়গুণে বাঙালির মনে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিক এবং সিনেমায় অভিনয় করে সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছেন। পর্দার সামনে তাঁকে দেখে যত সহজ মনে হয়, বাস্তবের পথটা ততটাও সহজ ছিল না। অভিনয়কে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন বলেই আজও নিজের জায়গায় অটল তিনি। বলছিলাম, অভিনেত্রী মৌসুমী সাহা-র কথা।
১৯৮৯ সালে অভিনয়ের জগতে পা রাখেন মৌসুমী। সেই সময়ই সুযোগ পান তরুণ মজুমদারের ছবিতে অভিনয়ের। কিন্তু টার্নিং পয়েন্ট ছিল একটি ধারাবাহিক— ‘জন্মভূমি’। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমেই দর্শকমন জয় করে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেন তিনি। তবে অভিনয়জীবনের শুরুর সেই দিনগুলো খুব একটা সহজ ছিল না তাঁর কাছে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়ের কথা প্রকাশ্যে আনেন অভিনেত্রী। তিনি জানান, পেশাদার জীবনে স্বামীর সহযোগিতা পেলেও, শাশুড়ির থেকে সেইরকম সহানুভূতি পাননি একেবারেই। অভিনয়জগৎ সম্পর্কে তখনকার দিনের বহু প্রচলিত একটি ভুল ধারণাই ছিল শাশুড়িমার মধ্যে— এই ‘লাইনটা খারাপ’, ‘এই পেশায় খারাপ মেয়েদের যাতায়াত’। সেই সংকীর্ণ মানসিকতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল তাঁকে।
তবে কোনও বাধাই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অভিনয়ের টানে তিনি বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ‘জন্মভূমি’ ধারাবাহিক চলাকালীন শাশুড়িকে আত্মীয়দের বাড়ি নিয়ে যেতেন তিনি। সেখানে ‘কাস্ট’-এর বৌমাকে দেখে গর্ববোধ করতেন আত্মীয়রা, আর সেটাই ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে শাশুড়ির মনোভাব।
আরও পড়ুনঃ “খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি… কাউকে বলিনি” — কী এমন ঘটছে স্বস্তিকার জীবনে, যা লুকিয়ে রেখে চালিয়ে যাচ্ছেন শ্যুটিং?
সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে সেদিন, যেদিন মৌসুমী সাহা ‘অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ পান। নিজের হাতে শাশুড়িকে নিয়ে যান পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে। পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা বৌমাকে দেখে সেদিন শাশুড়ি মা বুঝেছিলেন, তাঁর বৌমা কোনও খারাপ ‘লাইন’-এ নেই। বরং অভিনয় একটা সম্মানজনক পেশা, যার মাধ্যমে সসম্মানে এগিয়ে যাওয়া যায়। মৌসুমী সাহা বললেন, “এই কথাটা বোঝাতেই আমি অভিনয় ছাড়িনি।” আর এই সাহসী জেদ, লড়াই ও ভালোবাসার জোরেই আজও তিনি বাংলার পর্দার প্রিয় মুখ।