তাঁর নাম মানেই ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন দর্শন। তাঁর কণ্ঠে বরাবর উঠে আসে সমাজের অসঙ্গতি, বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব আর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ। তিনি আর কেউ নন, সঙ্গীতশিল্পী ‘নচিকেতা চক্রবর্তী’ (Nachiketa Chakraborty)। এবারও সেটার ব্যতিক্রম হল না, সদ্য প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন গান ‘কৃষ্ণ তোমার সঙ্গে যাব’। গানের পরতে পরতে যেমন ফুটে উঠেছে কলকাতার রূপ, তেমনি গানের মূলে রয়েছে এক এমন কৃষ্ণের (Lord Krishna) খোঁজ, যিনি ভগবান নন, বরং এক গণতান্ত্রিক নায়ক।
এক সাক্ষাৎকারে এই গান এবং এর ভাবনার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নচিকেতা জানিয়েছেন, তিনি কৃষ্ণকে ঈশ্বর বলে মানেন না! বরং তিনি কৃষ্ণকে দেখেন এক কর্মযোগী মানুষেরূপে। তাঁর মতে, কৃষ্ণ ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন তাঁর কাজের জন্য। নচিকেতার ব্যাখ্যায়, কৃষ্ণকে ঘিরে চারপাশে যে অলৌকিক গল্প গড়ে উঠেছে, সেগুলি মূলত তাঁর ক্ষমতাকে ঐশ্বরিক প্রমাণ করার জন্য। তাঁর কথায় এইসব গল্পের উৎস আছে ব্রাহ্মণ্য প্রভাবের মধ্যে।
তবে কৃষ্ণ নিজে ব্রাহ্মণ ছিলেন না, এমনকি ক্ষত্রিয় কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়। গায়ক আরও জানান, তিনি কৃষ্ণভক্ত, কিন্তু কোনও ধর্মীয় আচার বা পুজো মানেন না। কৃষ্ণের প্রতি তাঁর ভালোবাসা মূলত চিন্তার দিক থেকে, বিশ্বাসের জায়গা থেকে। আর সেই কারণেই তিনি চান আজকের সময়ে কৃষ্ণ যেন আবার ফিরে আসেন।
তবে সেই কৃষ্ণ যেন ধর্মীয় অবতার নন, বরং হতে হবে চাণক্যের মতো এক রাজনৈতিক দূরদর্শী, যিনি সমাজকে এক নতুন পথ দেখাতে পারেন। নচিকেতার গানে বারবার উঠে এসেছে তাঁর শহর, কলকাতা। এই গানেও তিনি বলেন, কলকাতা তাঁর সবথেকে প্রিয় শহর, অথচ এটাই আবার তাঁর চোখে সবথেকে অপরিষ্কার শহর। তিনি চান তাঁর শহরটা পাল্টাক, গড়ে উঠুক এক নতুন রূপে।
আরও পড়ুনঃ প্রেমে বাধা, তাই বিয়ে হল না টলি অভিনেত্রীর! রাজনীতি থেকে অভিনয় প্রেম নিয়ে অকপট রিমঝিম মিত্র, জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে কী বলছেন তিনি?
আর সেই রূপান্তরের জন্য দরকার এক কৃষ্ণের, যাঁকে ঈশ্বর বানিয়েছে পরবর্তীকালে দক্ষিণপন্থীরা। সবশেষে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানও স্পষ্ট করে দেন নচিকেতা। জানান, তিনি বরাবরই বামপন্থী ছিলেন, এখনও সেই পথেই বিশ্বাসী। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে, কৃষ্ণকেও তিনি দেখেন এক বামপন্থী ভাবনার পুরুষ হিসেবে, যেমন কার্ল মার্ক্স এবং লেনিন। সেই কৃষ্ণই আজকের সমাজে সত্যিকারের প্রয়োজন—এটাই গায়কের বার্তা।