‘বুড়োটে নায়ক আর বুড়ি নায়িকার কচিপনা জঘন্য’! ‘এইসব নায়ক নায়িকাদের নিয়ে কিভাবে এগোবে বাংলা কমার্শিয়াল সিনেমা?’ নতুন প্রতিভারা সুযোগ পাচ্ছে না কেন? প্রশ্ন তুলছেন দর্শকরা

সম্প্রতি বাংলা চলচ্চিত্রে এক আলোচিত নাম হয়ে উঠেছেন অভিনেতা জিতু কামাল। তাঁর নতুন ছবি ‘বাবু সোনা (Babu Sona)’ মুক্তির পর থেকেই নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ছবিতে তিনি জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চ্যাটার্জীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন। তবে ছবিটি মুক্তির পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ কেউ ছবির বিষয়বস্তু ও চরিত্র চিত্রণ নিয়ে সন্তুষ্ট নন, আবার কেউ ছবির বিনোদনমূলক দিকটি উপভোগ করেছেন। বিশেষ করে, জিতু কামালের আগের ছবি ‘অপরাজিত’ যেখানে তিনি কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটে দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি।

‘অপরাজিত’ ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে জিতু কামালের অভিনয় এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে, অনেকেই সেটিকে সত্যজিতের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি বলে মনে করেছিলেন। সেই অনবদ্য অভিনয়ের পর তাঁর পরবর্তী ছবির জন্য দর্শকদের কৌতূহল ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ‘বাবু সোনা’ সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার একটি চলচ্চিত্র, যা অনেকের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্নতর বলে মনে হয়েছে। এই ছবির ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এটি কি সত্যিই জিতুর কেরিয়ারের জন্য সঠিক পদক্ষেপ ছিল কিনা। তবে অভিনেতা নিজে বলছেন, তিনি সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চান এবং নিজেকে বদ্ধ পরিসরে আটকে রাখতে চান না।

বাংলা কমার্শিয়াল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা বিবেচনায়, ‘বাবু সোনা’র মতো ছবি কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করেন, ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন মুখের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে বেশি। তবে এক্ষেত্রে অনেকেই যুক্তি দেখান যে, অভিজ্ঞ অভিনেতারা যেহেতু তাদের অভিনয়ের দক্ষতা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছেন, তাই প্রযোজকরা তাদের উপর নির্ভর করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অন্যদিকে, নতুন প্রতিভাবান অভিনেতাদের সুযোগ দেওয়া হলে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার হতে পারে। কিন্তু বক্স অফিসের সাফল্য ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নির্মাতারা ঝুঁকি নিতে চান না।

আরও পড়ুনঃ ভিভান, রাজাদের দেওরের চরিত্র দেখালে কি অসুবিধা হত? মেনে নেওয়া যাচ্ছে না চরিত্রগুলোকে! ‘বয়স হয়েছে, কাজ ছাড়ুন’ ফের দর্শকদের কটাক্ষের মুখে লীনা গাঙ্গুলী

জিতু এবং শ্রাবন্তীর নতুন ছবি ‘বাবু সোনা’ মুক্তির আগেই নানা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেকেই বলছেন, বাংলা কমার্শিয়াল সিনেমায় নতুন মুখদের সুযোগ না দিয়ে বারবার একই পুরনো অভিনেতাদের নেওয়া শিল্পের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। অনেকেই বলছেন এই ধরনের জুটিকে প্রাধান্য দিলে নতুন প্রতিভারা পর্দায় জায়গা পাবেন না। এক্ষেত্রে এসেছে নানান কটাক্ষের ঝড়ও। একজন বলেছেন, “নায়কটাকে পুরো ক্যালানে মদনের মত লাগছিল এই যে সত্যজিৎ রায়ের চরিত্র এতো দুর্দান্ত করেছিল মনেই হচ্ছে না।” আবার আরেকজন বলেছেন, এতো খারাপ জাস্ট জঘন্য।”

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বিশেষ করে যখন বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমা তরুণ অভিনেতাদের সামনে আনছে। নতুন পরিচালক ও প্রযোজকরাও নতুন মুখ নিয়ে কাজ করতে চাইলে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন অনেকে। তবুও, পরীক্ষিত তারকাদের সাফল্যের নিশ্চয়তার কারণে প্রযোজকরা ঝুঁকি নিতে চান না। ফলে, বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমা কি নতুন ধারার পথে এগোতে পারবে, নাকি পুরনো ফর্মুলাতেই আটকে থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।