রাজ্যের স্বার্থে মমতাকেই দরকার! বললেন পরমব্রত, “নিজের স্বার্থে, যে লোকের বিয়ে করা বৌকে নিয়ে পালায় তার এই সন্ত্রাসের শাসকদল তো পছন্দ হবেই!” নেটপাড়ায় আক্রান্ত অভিনেতা

সম্প্রতি রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের আগুন যেন আরও একবার জ্বলে উঠল, যখন সামনে এল তথ্য—পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষকের চাকরি চলে গেছে। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী এই ছাঁটাই, কিন্তু এর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতি, স্বজনপোষণ আর প্রশাসনিক অপারগতার কালো ছায়া স্পষ্ট। ঠিক এই সময়েই যখন শিক্ষিত যুবসমাজ ক্ষুব্ধ, বেকারত্ব নিয়ে জনমনে হতাশা তীব্র, তখন টলিউডের পরিচিত মুখ ‘পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়’ (Parambrata Chatterjee) এর এক পুরনো রাজনৈতিক মন্তব্য যেন অনেকের চোখ কপালে তুলে দিয়েছে।

সদা ‘প্রগতিশীল’ তকমা নিয়ে বাম ঘরানার প্রতি অনুগত বলে পরিচিত পরমব্রত বলেছিলেন—“এই মুহূর্তে বিজেপি-র সবথেকে বড় বিকল্প তৃণমূল।” এমন মন্তব্যের পিছনে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উপলব্ধি থাকতেই পারে, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—যখন জনতা তৃণমূল সরকারের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ, তখন একজন অভিনেতার এই একমুখী সুর কেন? বহু শিক্ষক যখন নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পথে বসে কান্না করছেন, তখন পরমব্রতের এই ‘দূরদর্শিতায় আস্থা’র মন্তব্য আসলে তৃণমূলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য নয় তো?

ডেউচা পাঁচামি প্রকল্পে তাঁকে নেতৃত্বে বসানো, এরপর তাঁর হঠাৎ করেই তৃণমূলের গুণগান—সবই যেন এক সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক সামঞ্জস্যের ইঙ্গিত দেয়। আর দর্শকও থেমে থাকেননি। সমাজ মাধ্যমে একের পর এক কটাক্ষ—“আপনার অভিনয় ভালো লাগে, রাজনীতি নয়”, “যে সরকার ২৬,০০০ শিক্ষককে ছাঁটাই করল, তার মুখপাত্র হতে গেলেন?” এমন অনেক মন্তব্যে ভরে গেছে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম। তাঁর এই মন্তব্য পুনরায় ভাইরাল হতে শুরু করলে, অসন্তোষ ঝরে পড়েছে মানুষদের।

একজন নায়কের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবন ঘিরে দর্শকদের ক্ষোভ যেন উপচে পড়ছে। কেউ কেউ সরাসরি তাঁকে স্বার্থপর বলে আক্রমণ করেছেন, কেউ তুলেছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতা ও অতীত চরিত্রের সঙ্গে বিদ্রূপাত্মক তুলনা। অনেকেই অভিযোগ করছেন, রাজ্যের সংকটের সময় নিজেকে বাঁচাতে তিনি রাজনৈতিক দল বেছে নিচ্ছেন, আবার কেউ বলছেন, এটি তাঁর পুরনো অভ্যাস—নিজের ফায়দার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা। কেউ কেউ অভিনেতার সিনেমা বয়কটের ডাক দিয়েছেন।

কেউ আবার নাটকীয় ভাষায় তাঁর “মুখোশ” খোলার দাবি তুলেছেন। কেউ বলেছেন —“সিনেমার স্ক্রিপ্টের মতো যদি বাস্তবটা পড়তেন, বুঝতেন মানুষের রাগ কোথায়।” অন্যজন লিখেছেন, “উনি কি চাকরি চুরির টাকার ভাগ পেয়েছেন?”, আবার কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “রাজ্যের নয় নিজের স্বার্থে, যে লোকের বিয়ে করা বৌ কে নিয়ে পালায় তার এই দল তো পছন্দ হবেই!” অন্য এক অনুরাগীর কোথায় হতাশার সুর স্পষ্ট,– “সত্যি! পরমব্রত বাবু আর কত অভিনয় করবেন! ওঃ, ভুলেই গিয়েছিলাম যে আপনি একজন আদ্যন্ত ওভাররেটেড সুবিধাবাদী অভিনেতা মাত্র!

দেখবেন, হুট করে আবার বুদ্ধিজীবী হয়ে যাবেন না!” আবার আরেক অনুরাগীকে বলতে শোনা যায়,– “কয়েকদিন আগেই এদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের ঝামেলা হলো না ?? শ্যুটিং করতে দিচ্ছে না, আরও কত কী, এদের অনেক প্রতিবাদ, আন্দোলন ও তো দেখলাম। এখন আবার পালটি!” শেষমেশ একজন বলেন, “রাজ্যের নাকি নিজের আখের গোছানোর স্বার্থে??” স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, একাংশের কাছে এই অভিনেতা আর শুধু পর্দার নায়ক নন, বরং বাস্তব জীবনের বিতর্কিত চরিত্র।

তবে পরমব্রত নিজে জানিয়েছেন তিনি সরাসরি রাজনীতি করছেন না, ভবিষ্যতেও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু এই ধরনের ‘নিরপেক্ষতা’র মুখোশের আড়ালে যদি একতরফা প্রচার চলে, তাহলে তা দর্শক, নাগরিক এবং সমাজের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তারকাদের কথা অনেক মানুষ গুরুত্ব দেন, সেই দায়িত্বটা যদি স্বার্থের রাজনীতিতে হারিয়ে যায়, তাহলে প্রতিভার আসল শক্তিই মুছে যায়। আর এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে—অভিনেতা পরমব্রত না কি ভবিষ্যতের মুখপাত্র পরমব্রত?

আরও পড়ুনঃ ‘গৃহপ্রবেশ’এ স্মৃতি ফিরছে আদৃতের! শুভকে কি চিনে ফেলল আদৃত? বিয়ের সাজে শুভ, মন পড়ে আছে আদৃতের জন্য! জিনিয়ার চক্রান্তে বিধ্বস্ত সুমিত, এবার কি মোহনা জানবে আসল সত্যি?

শেষমেশ, যখন হাজার হাজার পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, তখন ‘জনতার পাশে দাঁড়ানো’ শুধু ফেসবুক পোস্টে নয়, মননের মধ্যেও থাকা উচিত। যে পরমব্রত এক সময় সমাজ সচেতন শিল্পীর প্রতীক ছিলেন, তিনিই কি আজ দলীয় হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছেন? নাকি এই ‘বিশ্বাস’ শুধুই রাজনৈতিক আর্থিক সুবিধার ফসল? উত্তর ভবিষ্যতের হাতে, কিন্তু দর্শকের আস্থা একবার হারালে, তা ফিরে পাওয়া সত্যিই কঠিন।