“আমাদের সময় বাংলা ছবিতে ‘বাঙালিয়ানা’ ছিল…ভাষা থেকে পোশাক পর্যন্ত ছিল নিজের গর্ব, এখন সবকিছু কেমন যেন ‘অবাঙালি’!”— বাংলা সিনেমার বর্তমান ধারা নিয়ে আক্ষেপ বর্ষীয়ান অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের!

বাংলা সিনেমার জগতে অভিনেতা ‘রঞ্জিত মল্লিক’ (Ranjit Mallick) এমন এক নাম, যাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রেখেছে তাঁর অনবদ্য সংলাপ, তেজস্বী ভঙ্গি এবং চরিত্রে প্রাণ দেওয়ার দক্ষতার জন্য। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই প্রবীণ অভিনেতার কণ্ঠে শোনা গেল আক্ষেপের সুর। বাংলা ছবির বর্তমান অবস্থান এবং নান্দনিকতার পরিবর্তন নিয়ে তিনি খোলাখুলি বলেন, আগের মতো আর “বাঙালিয়ানা” খুঁজে পাওয়া যায় না। এই সেটার কারণেই মূলত, বর্তমান ছবিগুলি আশানুরূপ ফল করতে পারছে না।

তাঁর মতে, আজকের বাংলা ছবিগুলো ক্রমে হারিয়ে ফেলছে সেই চেনা স্বাদ— ভাষা, পোশাক, আচরণ থেকে শুরু করে আবহ— সবেতেই যেন কোথাও যেন মিশে যাচ্ছে অন্য রঙের ছোঁয়া। রঞ্জিত মল্লিকের কথায়, একসময় বাংলা ছবিতে ‘বাংলা সংস্কৃতি’ই ছিল মূল ভিত্তি। পরিচালক থেকে অভিনেতা, গল্প থেকে সংলাপ— সব কিছুতেই ফুটে উঠত এক অনন্য গর্ব। এখনকার ছবিগুলোর দিকে তাকালে তিনি দেখতে পান এক ধরণের বিচ্ছিন্নতা।

অ্যাকশন, রোম্যান্স বা সামাজিক বার্তা— সবেতেই যেন অবাঙালি অর পাশ্চাত্যের ছোঁয়া এসে ঢেকে দিচ্ছে স্থানীয় স্বাদ। তাঁর ভাষায়, “আমাদের সময় বাংলা ছবির মধ্যে বাঙালিয়ানাটা বজায় ছিল। এখন যেন সেটা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে! আমাদের সময় বাংলা ছবিতে— বাংলা ভাষা, বাংলা পোশাক এবং খাবার-দাওয়ার বেশি প্রাধান্য পেত। আজকালকার ছবিগুলোতে সবকিছুই কেমন যেন অবাঙালি, সেটা স্পর্শকাতর দৃশ্য থেকে শুরু করে অ্যাকশন পর্যন্ত।

এটাই একটা বিস্তর ফারাক হয়ে গেছে, তখনকার বাংলা ছবি আর এখনকার বাংলা ছবির মধ্যে।” এই বক্তব্যেই ফুটে ওঠে উঠেছে এক প্রবীণ শিল্পীর মনখারাপ, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রকে দেখেছেন তার উত্থান থেকে আজকের রূপান্তর পর্যন্ত। তবে রঞ্জিত মল্লিকের হতাশা শুধুমাত্র সমালোচনার জন্য নয়, বরং এক গভীর ভালোবাসা থেকে আসা উদ্বেগ। তিনি চান বাংলা সিনেমা আবার তার নিজস্ব জায়গায় ফিরে যাক। যেখানে গল্প বলার ধরণেই থাকবে বাঙালির আত্মা, সংলাপে থাকবে মাটির গন্ধ।

আরও পড়ুনঃ ট্যাক্সির ডিকি খুলতেই বেরোলো র’ক্তা’ক্ত হাত! অভিনেতা সৌরভ দাসের ট্যাক্সিতে মিলল মানুষের দে’হ, চালক পলাতক! শহরতলীর জনবহুল রাস্তায় হঠাৎ আতঙ্ক! বিপদে পড়ে কি জানালেন অভিনেতা?

তাঁর চোখে সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, বরং সংস্কৃতির পরিচয় বহন করার একটি মাধ্যম। তাই তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলা সিনেমাকে যদি সত্যিই বাঁচাতে হয়, তবে তাকে আবার নিজের শিকড়ে ফিরতে হবে। আর বর্তমান প্রজন্মের অভিনেতাদের জন্যও তাঁর কথাগুলো যেন এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। সিনেমা বদলাবে, প্রজন্মও বদলাবে, কিন্তু নিজের সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা যদি হারিয়ে যায়, তবে সিনেমার আত্মাটাই হারিয়ে যাবে। তাঁর এই উপলব্ধি যেন শুধু এক শিল্পীর নয়, এক যুগেরও কণ্ঠস্বর— যে যুগ এখনও বিশ্বাস করে, ভালো সিনেমা মানে শুধু অতিরঞ্জকতা নয়, হৃদয়ের সংযোগও বটে।