“যাদের কমরেড ভেবে পাশের বাড়ির ছেলের মতো মিশেছি, তারা আমার সেই রূপের মর্যাদা রাখেনি!” “এই পেশায় সবাই স্বার্থপর, আমিও আগের মতো উন্মুক্ত নই!”— খারাপ সময় সহকর্মীদের আচরণ নিয়ে রূপঙ্কর বাগচীর আক্ষেপ!

বাংলা সঙ্গীত জগতের অন্যতম প্রভাবশালী নাম ‘রূপঙ্কর বাগচী’ (Rupankar Bagchi)। শুরু থেকে যিনি আজও সমান তালে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে চলেছেন, আজও তাঁর কণ্ঠে গাওয়া গান খুব জনপ্রিয়। আধুনিক বাংলা গান থেকে সিনেমার প্লেব্যাক, বিজ্ঞাপনের আবহ সংগীত থেকে শুরু করে ওটিটির গানে সুর দেওয়া— সব ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতায় নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন তিনি। সম্প্রতি শিল্পীজীবনের তিন দশক পূর্ণ করে রূপঙ্কর মুখোমুখি হলেন সংবাদ মাধ্যমের, যেখানে সঙ্গীতজীবনের সাফল্যের পাশাপাশি জীবনের অন্ধকার নিয়েও অকপট কথা বললেন তিনি।

রূপঙ্করের মতে, শিল্পীজীবন তাঁকে অসংখ্য প্রাপ্তি এনে দিলেও কিছু গভীর অপূর্ণতার ভারও বয়ে এনেছে। গান ও কাজের ব্যস্ততায় জীবনের কিছু অমূল্য মুহূর্ত হারিয়ে গেছে, যেমন মা-বাবার শেষ সময়ে তাঁদের পাশে থাকার সুযোগ না পাওয়া। একজন বাবা হিসেবেও নিজের মেয়ের সঙ্গে কাটানোর প্রতিশ্রুত সময় পুরোপুরি রক্ষা করতে না পারার আক্ষেপ তাঁর মনে গেঁথে আছে। সঙ্গীতজীবনের চাপ ও দায়বদ্ধতা ব্যক্তিগত সম্পর্কেও কখনও দূরত্ব তৈরি করেছে, যা তাঁকে এখনও কষ্ট দেয়।

জীবনে পেশাগত সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনাও রূপঙ্করের পিছু ছাড়েনি। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর কিছু বক্তব্যকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিতর্ক তৈরি হয়, যা কেবল মানসিক চাপই নয়, পেশাগত ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর গাওয়া কিছু গান জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন থেকে বাদ দেওয়া হয়। ক্রমাগত নেতিবাচক মন্তব্য ও ট্রোলিং শিল্পী হিসেবে তাঁর আত্মবিশ্বাস নাড়িয়ে দেয়, এমনকি একসময় গান ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি।

তবে রূপঙ্করের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ, খারাপ সময়ে সহকর্মীদের আচরণ নিয়ে। তিনি মনে করেন, যাদের একসময় খুব কাছের মনে করেছিলেন, বন্ধু বা সহযোদ্ধা ভেবেছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সম্মান পাননি। তাঁর ভাষায়, তিনি অনেক খোলা মনে সবার সঙ্গে মিশেছেন, যাতে মানুষ সহজেই কাছে পেতে পারে। শিল্পীর কথায়, “একটা সময় যাদের আমি খুব কাছের মনে করেছি, ভেবেছি আমরা একই দলের কমরেডদের মতো।

আরও পড়ুনঃ ভুল হলে ক্ষমা থাকলেও অন্যায় কখনো সহ্য করি না! বাড়ির প্রতিটি মানুষকে সম্মান করতে হবে! এটাই আমার জীবনের আদর্শ, অকপট অঞ্জনা বসু

অনেক হাসি-ঠাট্টা করেছি, পাশের বাড়ির ছেলেটার মতো মিশেছি, যাকে খুব সহজেই কাছে পাওয়া যায়, ভালোবাসা যায় আবার মন্দবাসাও যায়। এখন মনে হয় তাদের আমার ওই রূপটা দেখানো উচিত হয়নি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলতে পারি এই পেশাটায় খুব স্বার্থপরতা আছে।” শিল্পীজীবনের দীর্ঘ পথচলায় তিনি বুঝেছেন, সবার হাসি বা আলাপের আড়ালে সত্যিকারের সহমর্মিতা থাকে না সবসময়। তবুও তিনি বিশ্বাস করেন, গান ও সুরের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে মঞ্চে—যতই আক্ষেপ বা অভিমান থাকুক না কেন।