ভালোবাসা যখন সত্যি হয়, তখন বয়স, সমাজ বা কটাক্ষ—কোনও কিছুই বড় হয়ে দাঁড়ায় না। টলিপাড়ায় এমন বহু সম্পর্ক এসেছে, আবার হারিয়েও গেছে। কিন্তু কিছু সম্পর্ক ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করে নেয়—নীরবে, দৃঢ়তায়। সোহিনী সেনগুপ্ত ও সপ্তর্ষি মৌলিক তেমনই এক জুটি। গ্ল্যামারের ঝলকানি বা চর্চার আলো নয়, তাঁদের সম্পর্ক বরাবরই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আর পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর দাঁড়িয়ে। তাই তাঁদের জীবনদর্শন নিয়ে কথা উঠলেই স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল বাড়ে দর্শকমহলে।
দু’জনের আলাপ হয়েছিল ২০১৩ সালে, ‘নাচনী’ নাটকের মঞ্চে। কাজ করতে করতে বন্ধুত্ব, আর সেখান থেকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে জীবন কাটানোর। বয়সের ফারাক নিয়ে সেই সময় থেকেই নানা মন্তব্য, ব্যঙ্গ, এমনকি কটাক্ষও শুনতে হয়েছে সোহিনীকে। কখনও কখনও সপ্তর্ষিকে তাঁর ছেলে বলেও বিদ্রুপ করা হয়েছে। কিন্তু সেসব কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের মতো করেই পথ চলেছেন এই দম্পতি। সময়ের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক আরও পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি পরিচালক সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের একটি পডকাস্টে হাজির হয়ে সোহিনী নিজের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। সেখানেই উঠে আসে মা না হওয়ার বিষয়টি। অভিনেত্রী স্পষ্ট করে জানান, এটি কোনও হঠকারী ভাবনা নয়, বরং তাঁদের দু’জনেরই মিলিত এবং সচেতন সিদ্ধান্ত। সমাজ যেখানে দাম্পত্যের সঙ্গে মাতৃত্বকে প্রায় বাধ্যতামূলক করে দেখে, সেখানে এই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা তৈরি করেছে।
সোহিনীর কথায়, এই বিষয়ে সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থান সপ্তর্ষির। তিনি জানান, স্বামী বাবা হতে চান না এবং সেই সিদ্ধান্ত একেবারেই সচেতনভাবে নেওয়া। দায়িত্ব নেওয়ার জায়গাটা তিনি নিজে চান না—এই সত্যিটা সোহিনী বারবার যাচাই করেছেন বলেও জানান। অন্যদিকে, নিজের ভাবনার কথাও অকপটে বলেন অভিনেত্রী। তাঁর মতে, একসময় অন্যদের দেখে মনে হয়েছিল, হয়তো মা হওয়াটা সুন্দর অভিজ্ঞতা হতে পারে। কিন্তু গভীরে গিয়ে বুঝেছেন, এই ইচ্ছেটা তাঁর নিজের ভেতর থেকে আসেনি।
আরও পড়ুনঃ “গল্পই প্রমাণ করে দিচ্ছে, লেখিকার রুচি কতটা নিম্ন মানের!” “নোং’রামির শেষ নেই যেন, এই সিরিয়েলের সবাই চরি’ত্রহীন!” বাবিল-মিটিলের সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি ও পর’কীয়া নিয়ে চরম অসন্তোষ! ‘চিরসখা’র দর্শকরা এবার লেখিকাকে তুললেন কাঠগড়ায়!
সোহিনী বলেন, মা হওয়া মানেই সুখ—এই ধারণায় তিনি বিশ্বাস করেন না। বিয়ে, সন্তান—সবটাই যে সবার জীবনে একইভাবে আনন্দ নিয়ে আসে, এমনটা নয়। নিজের জীবনযাত্রা, মানসিক প্রস্তুতি আর ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা বুঝেই তিনি এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। প্রতিদিন সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া, তাকে সময় দেওয়া—এই জায়গাগুলোয় তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নও তাঁর ভাবনায় এসেছে। তাই সমাজের প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে নিজের মতো করে বাঁচার পথটাই বেছে নিয়েছেন সোহিনী ও সপ্তর্ষি। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত ভালোবাসা আর পারস্পরিক সম্মানের এক অন্যরকম সংজ্ঞাই তুলে ধরে।






