একজন সহকর্মীকে হারানো মানে যে সবসময় শুধু পেশাগতভাবে একজনকে হারানো সেটা নয়, বরং কিছুজনের জন্য জীবনের একটা অংশ যেন হঠাৎ করেই ফাঁকা হয়ে যায়। অভিনেত্রী ‘সুদীপা বসু’র (Sudipa Basu) জীবনেও এমনই এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, যেদিন তিনি অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Pijush Ganguly) মৃ’ত্যুর খবর পান। দিনের পর দিন একসঙ্গে কাজ করার পর হঠাৎ এমন খবর পেয়ে মানতে পারেননি তিনি। সেই মানুষটি আর নেই, কিন্তু কাজের ফাঁকে সেই পুরনো মুহূর্তগুলো বারবার ফিরে আসে।
এদিন সুদীপা সেই অভিজ্ঞতার কথাই ভাগ করে নিলেন পীযূষের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে। অভিনেত্রীর কথায়, পীযূষ শুধু একজন দক্ষ অভিনেতাই ছিলেন না, বরং মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী। তিনি বলেন, “আমি ওকে ভীষণ মিস করি মাঝে মাঝেই।” ‘ম্যাডলি বাঙালি’ এবং ‘চিত্রচোর’— এই দুই ছবিতে পীযূষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল সুদীপার জন্য বিশেষভাবে মূল্যবান। সেই কাজের মুহূর্তগুলো, সংলাপের ভেতরে লুকিয়ে থাকা হাসি-মজা কিংবা ক্যামেরার বাইরে বন্ধুত্ব, সবকিছু আজ শুধুই স্মৃতি।
পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃ’ত্যুর খবর পাওয়ার মুহূর্তটা ছিল আরও ভেঙে পড়ার মতো। তখন সুদীপা এবং তাঁর দল কাজ করছিল ‘মিস্টার পিচম অ্যান্ড মিসেস পিচম’ নাটকে। সে সময় অঞ্জন দত্তের প্রতিক্রিয়া বিশেষভাবে মনে গেঁথে আছে তাঁর। সুদীপা জানান, অঞ্জনের চোখ ছিল লাল, মুখ গম্ভীর, অথচ মুখে বলেছিলেন “না, কষ্ট হচ্ছে না।” তবুও সুদীপা বুঝেছিলেন, ভিতরে ভিতরে তিনি কতটা ভেঙে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কিছু বলার ছিল না কারও। এমন পরিস্থিতিতে কথাও যেন অর্থ হারিয়ে ফেলে, আর চারপাশে কেবল স্তব্ধতা ঘিরে ধরে।
তবে এটা শুধুমাত্র সুদীপা বা অঞ্জনের অভিজ্ঞতা ছিল না, বরং যারা পীযূষকে কাছ থেকে চিনতেন, সবার মাঝেই তাঁর মৃ’ত্যু একটা বড় শূন্যতা তৈরি করে। বিশেষ করে ‘জল নুপুর’ ধারাবাহিকে যখন তিনি কাজ করছিলেন, তখন সহকর্মী অপরাজিতা আঢ্য ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পীযূষের মৃ’ত্যু তাঁর জন্যও একটা কঠিন সময় বয়ে এনেছিল। এই ধারাবাহিকেই তাঁর চরিত্রটি তাঁর মৃ’ত্যুতে শেষ হয়ে যায়, যেন বাস্তব আর অভিনয়ের মাঝে বিভাজনরেখা মুছে যায় এক মুহূর্তে।
আরও পড়ুনঃ “আমার গয়নার শখ নেই, কাঞ্চনই আমার সেফটি ডিপোজিট!”— ধনতেরসের দিন অকপট স্বীকারোক্তি শ্রীময়ী চট্টরাজের!
এইসব সহ-অভিনেতাদের প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট যে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরলোক গমন শুধু একজন অভিনেতার উজ্জ্বল অধ্যায়ের শেষ নয় বরং এক মানবিক সম্পর্কের অপূর্ণ অধ্যায়ও। দর্শক থেকে সহকর্মী– সবার স্মৃতির পাতায় তিনি থেকে যাবেন একান্তভাবেই, কখনও হাসির মুহূর্তে, কখনও গভীর সংলাপে, কখনও বা সহকর্মীদের চোখের জলেই। আর সেই সব মুহূর্তই হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও আপন হয়ে উঠবে, আরও জীবন্ত হয়ে উঠবে সুদীপার মতো সহঅভিনেতাদের হৃদয়ে।