নতুন করে জীবনের লড়াই শুরু করেছেন ‘স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়’ (Swaralipi Chatterjee), ব্যক্তিগত জীবন ভেঙে পড়লেও স্থির থাকাটাই বেছে নিয়েছেন তিনি। স্বামী সৌম বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একাই মেয়েকে বড় করছেন এই টলিপাড়ার অভিনেত্রী-উদ্যোক্তা। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের মতো করে একটি ক্যাফে চালানো, আর সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘আবার বৈঠক’ পডকাস্ট, সবকিছুই যেন তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়ের অংশ। ছোট থেকেই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইচ্ছেটা ছিল আর আজ সেই জোরেই তিনি নিজের পথটা তৈরি করেছেন নিঃশব্দে, কোনও আড়ম্বর ছাড়াই।
মডেলিং দিয়ে শুরু, তারপর সঞ্চালনার পর ধীরে ধীরে পর্দার সামনে পরিচিতি বাড়তে থাকলেও মানসিকভাবে তখনও খুব ছোট ছিলেন স্বরলিপি। ‘হাউ মাউ খাউ’ রিয়্যালিটি শোর অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনে বড় একটা দাগ কেটে দেয়। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও বহু পরিচিত মুখ, যার মধ্যে ছিলেন মীর আফসার আলীও। এতদিন সেই ঘটনাকে চেপে রাখলেও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সেই সময়কার নীরবতা আজও তাঁর মনে তীব্র অস্বস্তি তৈরি করে। তিনি বলেন, “তখন আমি ছোট ছিলাম বলে প্রতিবাদ করতে পারিনি, কিন্তু আজ এরম হলে আমি প্রতিবাদ করব।
আমার কথাটা বলার কারণ ছিল একটাই যে, মীর দারও মেয়ে আছে আর আমারও মেয়ে আছে। আমি যেমন এমন কিছু হলে আমার মেয়ের সঙ্গে প্রতিবাদ করব, তেমনই মীর দাও কিন্তু মেয়ের বাবা হয়েই প্রতিবাদ করবে। তবে সেইদিন কেন এমন করলেন?” সেদিনের সেই ঘটনায় কী ঘটেছিল, সেটাও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন তিনি। স্টুডিওতে তুলনামূলকভাবে ছেলেদের উপস্থিতি ছিল বেশি, আর সেই পরিবেশেই হঠাৎ মীরের একটি মন্তব্য তাঁকে অসহায় করে তোলে। স্বরলিপির কথায়, “হঠাৎ মীর দা বলল যে ‘স্বরলিপি তোর বু’কগুলো আমায় খুলে দিয়ে দে না!'”
এই অভিজ্ঞতা শুধু ব্যক্তিগত অপমান নয়, বরং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবিও। স্বরলিপির মতে, মেয়েরা মুখ খুললেই বদল আসে। তিনি আরও বলেন, “আজকের যুগে মেয়েদের অলক্ষ্মী-কালী হওয়াটা খুব জরুরি। যত মেয়েরা মুখ খুলবে, ততই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে। আমার তো মনে হয় রোজ রোজ ধর্ষণের যেসব খবর পাচ্ছি সেগুলো মেয়েরা মুখ খুলছে বলেই। কারণ আমাদের সময় হয়তো ধর্ষণ হয়নি, কিন্তু দশজন মেয়ের মধ্যে দশজনই বলবে ছোটবেলা বা তার পরেও কোনও না কোনও ভাবে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে তারা।
আমারও এমন একটা অভিজ্ঞতা আছে, আজও রাতে স্বপ্নে আসে। ক্লাস এইটে পড়া কালীন সাঁতার শিখতে যেতাম বন্ধুর বাড়ি। একদিন তার কাকা আমায় জলে নিয়ে গিয়ে যা ইচ্ছা তাই করেছে, সেদিন কিন্তু বাবার ভয়ে মা আমায় চুপ করিয়ে দিয়েছিল।” তাঁর নিজের জীবনের তীব্র স্মৃতি আজও তাকে তাড়া করে আর সেই কারণেই আজ তিনি নীরবতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কথা বলছেন। সমাজের চোখে কী গ্রহণযোগ্য আর কী নয়, এই প্রশ্নগুলোই তাঁকে আরও ভাবিয়ে তুলেছিল। স্বরলিপি বলেন, “এক সময় আমি লিভইন করতাম, তারপরে সবাই বলল সমাজ কি বলবে বলে বিয়ে করলাম।
আরও পড়ুনঃ #BigBreaking অবশেষে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর নতুন ‘অপর্ণা’র মুখের রহস্যভেদ! ইন্ডাস্ট্রির কেউ নন, দিতিপ্রিয়ার পর আর্য স্যারের ‘অপর্ণা’ হয়ে আসছেন ঝারগ্রামের নতুন প্রতিভা! জেনে নিন তাঁর পরিচয়!
এরপর বাচ্চা নিলাম কিন্তু শেষে পুরুষ মানুষটাই যখন ছেড়ে চলে গেল, সমাজ কিন্তু মেয়েটাকে নিয়ে সেই কথাটা বলেছে! তাহলে আগে থেকে কেন শুনবো, যখন তারা পরে বলবেই! আমার মতো সমাজে বিভিন্ন স্তরের নারীরা কেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে আমার মনে এই নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। তিলোত্তমা কাণ্ডের পর সেই জানার ইচ্ছেটা আরও বেড়ে গেল আর শুরু করলাম ‘আবার বৈঠক’ পডকাস্ট।” এখন নিজের লড়াইয়ের মতোই, অন্যদের গল্প শোনানোর মধ্যেও তিনি খুঁজে পান শক্তির উৎস। কারণ তাঁর বিশ্বাস, বলার মধ্যেই শুরু হয় বদলের পথ।






