স্বামীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেও সুখ পাননি! নিজের ছেলেকে মরতে দেখেছেন! রীতা কয়রালের জীবনের কাহিনী চোখে জল আনবে আপনার!

নয়ের দশকের বাংলা সিনেমার জগতে অন্যতম দাপুটে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। একাধিক সিনেমায় করেছেন খলনায়িকার অভিনয়। একসময় তাকে পর্দায় দেখলেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন দর্শকরা। আবার কখনও তার মমতাময়ী মায়ের রূপ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সিনেমাপ্রেমীরা। এতটাই দক্ষ অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। অথচ অভিনয় জগৎ থেকে তিনি পাননি যোগ্য সম্মান। শেষ জীবনে চরম আক্ষেপের সঙ্গেই তিনি গমন করেন পরলোকে।

টেলিভিশন থেকে থিয়েটার সবটাই মাতিয়ে রাখার ক্ষমতা ছিল তার। আমরা কথা বলছে বাংলা সিনেমা এবং ধারাবাহিকের লোকপ্রিয় অভিনেত্রী রীতা কয়রালের। জানা গেছে ১৯৫৯ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন অভিনেত্রী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসেববিজ্ঞানেই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী। অভিনেত্রী তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন দূরদর্শনের একজন সংবাদ পাঠিকা হিসেবে। সংবাদ পাঠের মাধ্যমেই ক্যামেরার সামনে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।

সেইখান থেকেই তার যোগাযোগ হয় অভিনয় জগতের সঙ্গে। বিষ্ণু পাল চৌধুরী পরিচালিত ধারাবাহিক জননী মাধ্যমেই প্রথমবার পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ধারাবাহিকে সুপ্রিয়া দেবী দ্বিতীয় কন্যা এবং পার্থ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী চরিত্রে তার অভিনয় সারা ফেলেছিল টলি জগতে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অঞ্জন দত্ত, অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো তাবড় তাবড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে গেছেন তিনি। তার সিনেমাগুলোর মধ্যে আত্মজ, খেলাঘর, পারমিতার একদিন, দত্ত বনাম দত্ত, বর আসবে এখনই, বড় বউ, সুয়রানী দুয়োরানি, অশোক, গুন্ডা, জীবন নিয়ে খেলা, রাজমহল বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

Actor Rita Koiral passes away | Entertainment-others News - The Indian  Express

এছাড়াও মৌচাক, স্ত্রী, বিন্নি ধানের খই, এক আকাশের নিচে, সাত পাকে বাঁধা ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। শেষবার তাকে দেখা গেছিল ধারাবাহিক স্টার জলসার ধারাবাহিক রাখি বন্ধনে। ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালিত সিনেমা বাড়িওয়ালিতে কিরণ খেরের গলায় ডাবিং করেছিলেন রীতা কয়রাল। ছবিটি যখন জাতীয় জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয় তখন তারও পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি। অভিনেত্রী রীতা কয়রাল জানিয়েছিলেন অনুপম খের তাকে তাদের পুরস্কারের একটি অংশ দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কিরণ খের সিনেমায় ডাবিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

সেই আক্ষেপ তার ছিল সারাজীবন। যদিও অভিনয়ের পর তার প্রভাব পড়তে দেননি তিনি। ব্যাক্তিগত জীবনে বাংলার জনপ্রিয় খলনায়ক সৌমিত্র বন্দোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০০ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সেই অকালে প্রয়াত হন অভিনেতা। তারপর জনপ্রিয় থিয়েটার অভিনেতা অজয় কয়রালকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন রীতা। তাদের একটি কন্যা সন্তানও আছে যার নাম অমৃতা। তাদের একটি পুত্র সন্তানও ছিল কিন্তু খুব অল্প বয়সেই প্রয়াত হয় সে।

আরও পড়ুন: অর্জুন নয় সূর্যকেই ভালোবাসে দীপা! ইরাকে বিয়ে করে অসুখী সূর্য‌ও, ‘অনুরাগের ছোঁয়ায়’ কবে লাগবে ভালোবাসার রং?

নাচের প্রতি আগাথ টান থাকার কারণেই তিনি খুলেছিলেন একটি নাচের স্কুল। তবে শরীরে হটাৎই ধরা পড়ে লিভার ক্যান্সার। শারীরিক অসুস্থতা সঙ্গে লড়াই করতে করতেও বেশ কয়েকবছর তিনি চালিয়ে গেছিলেন অভিনয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি আর। ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর মাত্র ৫৮ বছর বয়সেই সকলকে ছেড়ে তিনি পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুতে টলিপাড়ায় শোকের ছায়া নামলেও সেটি ছিল ক্ষণিকের। শেষকৃতে তিনি পাশে পাননি তার টলিপাড়ার কাউকেই। যদিও তার অভিনয় এখনও তাকে জীবিত রেখেছে দর্শকদের মনে। তাকে জানায় শ্রদ্ধা।