কখনও কখনও কিছু ঘটনা এমন গভীর ছাপ ফেলে যায়, যা সময়ের স্রোতেও ফিকে হয় না। মৃ’ত্যু হয়তো অবধারিত, কিন্তু কিছু মৃ’ত্যু থেকে যায় এক রহস্যের চাদরে ঢাকা। মানুষ ভুলে যায় হাজার কিছু, কিন্তু কিছু মানুষ থেকে যান চিরকাল। ছোটপর্দার অভিনেতা ‘রনি চক্রবর্তী’ (Ronnie Chakraborty) ঠিক তেমনই একজন, যাঁকে হারিয়ে ইন্ডাস্ট্রি শুধুই একজন অভিনেতাকে নয়, হারিয়েছে এক প্রাণচঞ্চল প্রতিভাকেও। জনপ্রিয় ‘ওগো বধু সুন্দরী’ ধারাবাহিকে তাঁর সংলাপ, হাসি কিংবা উপস্থিতি – সবই যেন আজও ফিরে দর্শকদের হৃদয়ে অমিলন। তিনি শুধু স্ক্রিপ্ট মেনে অভিনয় করতেন না, মেকআপ রুমেও প্রাণ জুগিয়ে রাখতেন।
কীভাবে হাসাতে হয়, কীভাবে আলাপ জমাতে হয়, সেটা রনির থেকে শেখার ছিল। কিন্তু রনির মৃ’ত্যুটা যেন এক অপূর্ণ প্রশ্নচিহ্ন হয়ে থেকে গেছে আজও। দিনটা ছিল ১৫ মে, ২০১৫। সেই রাত শুধু তাঁর জন্য নয়, বাংলা টেলিভিশন জগতের অনেকের কাছেই একটা দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে। সেদিন তাঁর সন্তানের অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণে যাওয়ার কথা ছিল। তার কয়েক দিন আগেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে রনি আড্ডাও দিয়েছিলেন। শারীরিক বা মানসিক দিক থেকে কোনও অসঙ্গতি ছিল না।
বরং উল্টো, সেই সময়কার সাক্ষাৎকার কিংবা কথোপকথনে ফুটে উঠত তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। এমন একজন মানুষের এমনভাবে বিদায় যেন বাস্তব নয়, একটা অসমাপ্ত গল্পের মতো। সেই দিন রাতে রোজের মত জিম করে ফেরার সময় পাশের সন্তোষপুরের পুকুরে সাঁতার কাটতে নেমেছিলেন রনি। দীর্ঘক্ষণ না ওঠার পর বন্ধুরা পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাঁর দে’হ উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলে পাওয়া গিয়েছিল বাইক, ফোন এবং জামাকাপড়।
পুকুরে হঠাৎ তাঁর নি’থর দে’হ পাওয়া, যেটা আজও অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। কারণ যাঁকে সবাই দেখেছে সুস্থ, হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত অবস্থায়- তাঁর এমনভাবে চলে যাওয়াটা একেবারেই মেলেনি কারও হিসেবের সঙ্গে। জাতীয় স্তরের সাঁতারু হয়ে কীভাবে জলে ডুবে মৃ’ত্যু হতে পারে? আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার, ময়নাতদন্তে মদ-মা’দক কিছুই মেলেনি। ফলে “দুর্ঘটনা না খুন?”- এই প্রশ্নটা এখনও ঘুরপাক খায় অনেকের মনে। তাঁর স্ত্রী যে খু’নের অভিযোগ করেছিলেন, সেই মামলাটিও আজও নিষ্পত্তি হয়নি।
আরও পড়ুনঃ “উত্তম কুমার খুব ভালো সময়ে চলে গেছে, ভগবানের অশেষ কৃপা তিনি খারাপ সময় দেখেননি…” হঠাৎ কেন মহানায়ককে নিয়ে এই বি’তর্কিত মন্তব্য করলেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী! অভিনয় জীবনে অতীতের কোন ঘটনার সামনে আনলেন অভিনেতা?
ঘটনাটির পর ইন্ডাস্ট্রি থেকে মিডিয়া, সব জায়গায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু কালের নিয়মে সব কিছু থিতিয়ে গেছে, তদন্তের গতি কমেছে, প্রশ্নগুলো থেকে গেল উত্তরহীন। আজ প্রায় এক দশক পরও রনিকে ভুলতে পারেননি তাঁর সহকর্মীরা, দর্শকরাও নয়। কারণ রনি শুধুই একজন অভিনেতা ছিলেন না- তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যাঁর হাসিতে, কথায়, চলাফেরায় প্রাণ ছিল। স্টুডিওর আলো, কিংবা সেটের হুলস্থুলের মাঝেও রনি ছিলেন একজন সহজ মানুষ। তাঁর না থাকায় যে শূন্যতা তৈরি করেছে, যেটা শুধু তাঁর ঘনিষ্ঠরাই নয়, পুরো ইন্ডাস্ট্রিই টের পেয়েছে।