বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একঝাঁক দাপুটে খলনায়িকার তাঁদের মধ্যে অভিনেত্রী ‘অনামিকা সাহা’ (Anamika Saha) র নাম আজও দর্শকদের মনে আলাদা জায়গা নিয়ে আছে। যদিও ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার আগে তাঁর নাম ছিল উষা, কিন্তু পর্দায় পরিচিতি পেতে নাম রাখেন ‘অনামিকা’। একসময় প্রায় প্রতিটি জনপ্রিয় ছবিতেই খলচরিত্রে তাঁকে দেখা যেত। চোখের চাহনি, ভয় ধরানো সংলাপ আর পরিপাটি অভিনয়ের জন্য অনামিকা সাহা হয়ে উঠেছিলেন বাংলা বিনোদনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
১৯৭৩ সালে প্রথম ‘আশার আলো’ ছবির হাত ধরে শুরু হয় তাঁর অভিনয় যাত্রা। তখনকার সুপারস্টার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মহানায়ক উত্তম কুমার এর মতো শিল্পীদের সঙ্গেও স্ক্রিন শেয়ার করেছেন অনামিকা। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৩০০-৪০০টিরও বেশি ছবি। ‘অনুসন্ধান’ ছবির “ফুলকলি রে ফুলকলি” গানের সেই দৃশ্যে আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। আট থেকে আশি, তাঁর চোখের চাহনিতে শিউরে উঠতেন সকলেই।
খলনায়িকার চরিত্রে তিনি এতটাই বাস্তব হয়ে উঠতেন যে দর্শক পর্দার ভিলেনকেও ভয় পেতে বাধ্য হতেন। অনামিকা সাহার কেরিয়ারে একবার বড় মোড় এসেছিল, পৌঁছাতে পারতেন আরও উচ্চতায়। তাঁকে অফার দেওয়া হয় বলিউড সিনেমা ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’তে অভিনয়ের জন্য। রানি মুখোপাধ্যায়ের বিপরীতে এই বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এলেও, দুর্ভাগ্যবশত করোনা পরিস্থিতির কারণে সরে আসতে হয় তাঁকে।
এরপরে ধীরে ধীরে তিনি হারিয়ে যেতে থাকেন বড় পর্দা থেকে, অথচ একসময় এই পর্দাই তাঁকে ঘিরে ছিল গর্বের মতো। ছোট পর্দায় যদিও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অনামিকা সাহা ভাগ করে নিলেন তাঁর কিছু দুঃখের কথা। জানালেন, জীবনের এতোটা সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কাটালেও আজ কেউ আর তাঁর খোঁজ রাখে না। কৃতিত্ব তো দূরের কথা, তাঁর নামটুকু পর্যন্ত কেউ উল্লেখ করে না। সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ অনামিকা সাহার প্রাক্তন সহঅভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্যকে ঘিরে।
আরও পড়ুনঃ “বাবার চাকরি চলে গেল, আর পড়া হলো না আমার। কালকে কি খাবো ভেবে সবাই কাঁদতাম।”— ‘মন ফাগুন’-এর অনুষ্কার ওরফে অমৃতার জীবনের অজানা অধ্যায়, কাঁদাবে আপনাকেও!
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী জানান, “ওর হাত ধরে আমি প্রথম সিনেমায় নিয়ে এসেছিলাম। মেয়ের মতোই ছিল আমার কাছে।” কিন্তু আজ সেই ‘মেয়ে’ই আর খোঁজ রাখে না তাঁর!সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গেলেও একবারও প্রকাশ্যে তাঁর নাম নেন না অপরাজিতা, এমনটাই দাবি অনামিকা সাহার। এই কথাগুলো যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়, টলিউডের আলোকময় দুনিয়ায় কিছু সম্পর্ক কতটা নিঃস্বার্থ থাকে আর কতটা উৎসাহী হয়ে যায় সময়ের সঙ্গে।