সময়টা ছিল ১৯৯৪। দূরদর্শনের পর্দায় মহিষাসুর আর দুর্গার সেই প্রচন্ড লড়াই দেখে ছোট ছোট বাচ্চারা কেউ ভয় কেঁদে ফেলত আবার কেউ হা করে তাকিয়ে থাকত। পর্দার দুর্গা সংযুক্ত ব্যানার্জিকেই এখন অবধি শ্রেষ্ঠ দুর্গা বলে মানা হয়। কিন্তু দুর্গার দাপটে মহিষাসুর আজ অবহেলিত। কেউ মনে রাখেনি অভিনেতা অমল চৌধুরীকে।
মহালয়ার সকালে টিভি খুললেই তাঁর অট্টহাসিতে বুক থর থর করে কাঁপতো। কারণ তিনি তো মহিষাসুর। টেলিভিশনের প্রথম অসুর। সেই সময় অসুরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অমল চৌধুরী। আর আজ পর্দার প্রথম অসুরের করুণ পরিস্থিতি। কোনরকমে দিন কাটাচ্ছেন অমল অসুর।
এক সময় পর্দার দাবুটে চরিত্রে অভিনয় করা এই অভিনেতার হাতে এখন আর নেই কাজ। মনেও রাখেনি কেউ। অভাবের সংসারে চোখের জল ফেলে দিন কাটছে অমল চৌধুরীর। তাঁর এই অভিনয় দক্ষতার জন্য পাড়া-প্রতিবেশীরা এখনো তাঁকে চেনে অমল অসুর বলেই। অভিমান এখন তাঁকে ভুলে গিয়েছে সবাই। বর্তমানে উনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন সম্পূর্ণ জানতে পারবেন বাকিটা পড়লেই।
মাথা ভর্তি কোকড়া চুল, পেশীবহুল বিরাট আকারের চেহারার জন্য দূরদর্শনের মহালয়ায় দুর্গার বিপরীতে মহিষাসুরের ভূমিকায় অভিনয়ের ডাক আসতো অশোকনগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অমল চৌধুরীর কাছে। দীর্ঘদিন ধরে কখনো অসুরের ভূমিকায় আবার কখনো যমরাজের অট্টহাসিতে দর্শককে মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি। আজ সেই সব অতীত।
এখনো তাই পুজো আসলেই সেই সোনালী দিনগুলোর কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে যায় অমল বাবুর। এখন শরীর স্বাস্থ্য অনেকটা ভেঙে পড়েছে বয়সের ভারে। মানসিক দিক দিয়েও ভেঙে পড়েছেন তিনি। অমল চৌধুরী কিন্তু একটা সময়ে বিনা পয়সায় বাচ্চাদের আঁকা গিয়েছেন।
মহালয়া ছাড়াও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যান্য অনেক কাজ করেছেন অমল চৌধুরী। প্রথম সারির অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করলেও আজ সবার চোখের আড়ালে চলে গেছেন অমলবাবু। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আর ডাক পান না স্টুডিও পাড়া থেকে। দিন কাটছে চরম আর্থিক অভাবে। চলে গিয়েছেন দাদা তাই অসুস্থ বোনকে নিয়ে সংসারযাপন করছেন অবিবাহিত অমলবাবু। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অভিনয়ের বদলে আজ হাতে তুলে নিয়েছেন রং-তুলি। হাতেগোনা কয়েকটি ক্লাস নিয়ে যা রোজগার করেন তাই দিয়ে কোনরকমে দিন চলে যায় অভিনেতার। অতীতে সেই সুবর্ণ অধ্যায়ের ছবি দেখলে তাঁর মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় এখনো।