বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ‘বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়’ (Basanti Chatterjee Death) বাংলা বিনোদন জগতের দীর্ঘ ইতিহাসের এক উজ্জ্বল মুখ। মাত্র ১৫ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করে, তিনি টলিউডে (Tollywood) অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেনের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গেও কাজের সুযোগ হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে অভিনয় করে আসলেও, জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি নানা শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। চলতি বছরের শুরুতে পাঁজর ভেঙে যাওয়ার পর তিনি একাধিক শারীরিক সমস্যায় পড়েন এবং প্রায় ছয় মাস শয্যাশায়ী ছিলেন।
এই সময়ে তিনি ‘গীতা এলএলবি’ (Geeta L.L.B) ধারাবাহিকে ব্রজবালা দেবীর চরিত্রে অভিনয় করছিলেন, কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শুটিংয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারছিলেন না। ফিজিওথেরাপি চলাকালীনও ঘটে এক দুর্ঘটনা, পায় গুরুতর চোট পান তিনি! যার ফলে হাঁটাচলার ক্ষমতাও ক্ষুণ্ণ হয়, এ কারণে তিনি পাকাপাকিভাবে অভিনয় ছাড়তে বাধ্য হন এবং কাজ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকটেও পড়েন। সংসার চালানো এবং চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্য নিজের সঞ্চয়ই ভর
যদিও কতদিন তা চালিয়ে যাবেন তাতে দুশ্চিন্তা ছিল তার। অভিনেত্রীর আর্থিক অবস্থার কথা জানার পর তার সহকর্মীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ‘গীতা এলএলবি’ ধারাবাহিকের প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তী তাঁকে ৯০ হাজার টাকার আর্থিক সাহায্য করেন। পাশাপাশি অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় সমাজ মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন জানান, যার ফলে সহশিল্পী এবং সাধারণ মানুষরা দান করেন প্রায় দুই লাখ টাকা। এই সহযোগিতা বাসন্তীর জন্য এক আশার আলো এনে দেয়।
বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতার মুখোমুখি হয়েও বাসন্তী চট্টোপাধ্যায় অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেননি। তিনি নিজেকে যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ করে কাজে ফিরে আসার চেষ্টা করছিলেন। কারণ অভিনয় ছিল তার জীবনের অপরিহার্য অংশ। অবস্থা যতই কঠিন হোক না কেন, তাঁর পেশার প্রতি ভালবাসা ও দায়িত্ববোধ ছিল অপরিসীম। তবে দীর্ঘ দিন স্বাস্থ্যগত সমস্যার সাথে লড়াই করার পর ২০২৫ সালের ১২ আগষ্ট বাসন্তী চট্টোপাধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
আরও পড়ুনঃ শেষ হতে চলেছে স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘গীতা এলএলবি’! গল্পে চরম নাটকীয় মোড়, গীতার মৃ’ত্যু দিয়েই শেষ! গীতা-স্বস্তিক এবার বিদায় জানাবে দর্শকদের! কবে হতে চলেছে ধারাবাহিকের শেষ সম্প্রচার?
তাঁর মৃত্যুর খবর প্রথম জানিয়েছিলেন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, উনি জানান শুটিং চলাকালীন রাত ন’টা নাগাদ এই খবরটি উনি পান। প্রাথমিকভাবে এই খবরে ভেঙে পড়লেও পরে বুঝতে পারেন, এতদিন ধরে যে কষ্ট বাসন্তী দেবী পাচ্ছিলেন, তার থেকে অবশেষে মুক্তি পেলেন তিনি। শেষ সময়ে তিনি পেটের ক্যা’ন্সার, কিডনির অকেজো হয়ে যাওয়া এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতির মতো সমস্যা নিয়েই বেঁচেছিলেন তিনি। আমরা অভিনেত্রীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।