বাংলার জনপ্রিয় ডান্স রিয়ালিটি শো ‘ডান্স বাংলা ডান্স ২০২৫’-এর (Dance Bangla Dance Grand Finale 2025) মঞ্চে এবারের সিজন ছিল একেবারেই বিশেষ। একদিকে প্রতিভাবান প্রতিযোগীদের অসাধারণ নৃত্য পরিবেশনা, অন্যদিকে নানা আবেগঘন মুহূর্তে দর্শকরা চোখ সরাতে পারেননি টিভির পর্দা থেকে। শেষমেশ গ্র্যান্ড ফিনালেতে চ্যাম্পিয়নসের খেতাব অর্জন করেন রিজু–রাজু ও কৃত্তিকা, আর সবার থেকে এগিয়ে গিয়ে সর্বোচ্চ বিজয়ীর মুকুট পান আদিত্য। তাঁর ‘রাম সিয়ারাম’ গানে অনন্য পারফরম্যান্স ফাইনাল মঞ্চে মাতিয়ে দেয় দর্শক ও বিচারক—উৎসবমুখর আবহে শেষ হয় প্রতিযোগিতা।
তবে এই উজ্জ্বল জয়ের মাঝেই ছায়া ফেলেছে এক বিশেষ বিতর্ক, যা ঘিরে রয়েছে প্রতিযোগিতার অন্যতম ফাইনালিস্ট ‘পূজা হালদার’কে (Puja Halder) নিয়ে। পূজা কোনও সাধারণ প্রতিযোগী নন। তিনি জন্মগতভাবে মূক ও বধির (Deaf and Dumb), তবুও শুধুমাত্র অনুভূতির শক্তিতে ছন্দ বুঝে নাচেন। ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা, আর মা-ই ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরেছেন। অডিশনের সময় তাঁর অসাধারণ নাচ দেখে মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী পর্যন্ত অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন।
শুনিয়েছিলেন সেই বিখ্যাত সংলাপ “ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত।” নাচের প্রতি পূজার নিবেদন ও সাহস তাঁকে শুধু প্রতিযোগিতার মঞ্চেই নয়, দর্শকদের মনেও আলাদা জায়গা করে দিয়েছে। তবে শেষপর্যন্ত পূজাকে বিজয়ী করা হয়নি, তিনি রানারআপ হয়েছেন। আর এখানেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই মনে করছেন, পূজার মতো একজন শিল্পীর জন্য আলাদা কোনও সম্মান বা বিশেষ পুরস্কার প্রাপ্য ছিল। তিনি কেবল প্রতিযোগিতা করেননি, শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে সবার সঙ্গে সমানভাবে লড়াই করেছেন।
যেখানে অন্য প্রতিযোগীরা স্বাভাবিকভাবে সবকিছু অনুভব করতে পারেন, সেখানে পূজার প্রতিটি নাচই আসলে ছিল এক একটি সংগ্রাম। এই কারণেই দর্শকের বড় অংশ মনে করছেন— জিতুক বা না-জিতুক, তাঁর জন্য বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। সমাজ মাধ্যমে এই নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই বলছেন, বিচারকরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁদের মতে, পূজা যে অনন্য শক্তি ও প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন, তা নিছক একটি রানারআপ শিরোপায় আটকে রাখা যায় না।
সাধারণ প্রতিযোগীদের মতোই তিনি নানা ধরণের নৃত্যশৈলীতে প্রতিবারই নতুন কিছু উপহার দিয়েছেন। অনেকেই বলছেন যে প্রতিযোগীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁর নাচ বারবার একই ধরণের ছিল, যেখানে পূজা ছিলেন অনেক বেশি বহুমুখী। ফলে এই রায় একেবারেই ন্যায্য নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। একজন লিখেছেন, “একজন বধির ও বোবা হয়েও পুজা সব স্বাভাবিক প্রতিযোগীদের সঙ্গে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করেছেন। একজন বিশেষ চাইল্ড হয়েও তিনি সর্বদা তাঁর সেরাটা দিয়েছেন, প্রতিটি পারফরম্যান্সে নতুন কিছু উপহার দিয়েছেন।
একঘেয়ে নাচ না করে তিনি নানা ধরণের নৃত্যশৈলী করেছেন এবং প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। তাহলে কেন ডান্স বাংলা ডান্স এত ভয়াবহ এবং বাজে সিদ্ধান্ত নিল?” আবার অন্যজন মন্তব্য, “পূজার অবশ্যই একটা বিশেষ সম্মান পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। কারণ ও ছাড়া যারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল তারা প্রত্যেকেই শারীরিক ভাবে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পূজা স্বাভাবিক না হয়েও যে ভাবে সবার সঙ্গে যে ভাবে নেচেছে তা অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য। এখানে বিচারকদের বিচার নিজেদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। প্রকৃত বিচার এখানে হয় না।”
আরও পড়ুনঃ “আমি কিছু জানি না, চরিত্র ভালো তাই করেছি!”— এই অজুহাতে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ বিতর্কে পিছিয়ে গেলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পাশে দাঁড়ালেন না নিজের সম্প্রদায়ের! এবার ‘হোক কলরব’-এও কি একই অজুহাত দেবেন তিনি? জাতির আন্দোলনকে হেয় করে, ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে পারবেন তিনি? নাকি রাজনৈতিক দলের জন্য পিঠ বাঁচাবেন?
আরেকজন আরও তীব্র কটাক্ষ করে লিখেছেন, “সব ডান্স স্কুল বন্ধ করে দেওয়া উচিত, কারণ নৃত্যশিল্পীদের প্রতিভা প্রদর্শনের কোনো সঠিক মঞ্চ নেই। ডান্স বাংলা ডান্স এক ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুজা হালদারকে বিজয়ী না করে। তিনি যে কোনো দিক থেকেই জেতার মতো প্রাপ্য প্রার্থী ছিলেন, তাঁর নাচ এবং পারফরম্যান্স ছিল অনেক ভালো। যিনি জিতেছেন, তিনি মোটেও বহুমুখী ছিলেন না এবং বারবার একই ধরণের পারফর্মেন্স করেছেন। এটি একেবারেই অন্যায় সিদ্ধান্ত, পুরোপুরি রাজনীতি এবং টাকার প্রভাবের ফল।” আপনাদের কি মতামত এই নিয়ে? জানাতে ভুলবেন না!