“সনাতনী আর্যভট্ট আর শূন্য ছিল বলেই আয়ের হিসেব করতে পারে!” “সনাতন মানুষকে উগ্রতা শেখায় না, সনাতন থাকাতেই এমন মন্তব্য করেও বেঁচে গেলে ভাই!”—অনির্বাণের ব্যাখ্যার জবাবে পাল্টা রুদ্রনীল ঘোষ!

টলিউডের জনপ্রিয় মুখ ‘অনির্বাণ ভট্টাচার্য’ (Anirban Bhattacharya) এবং তাঁর ব্যান্ড ‘হুলিগানইজম’-এর (Hooliganism) গান ঘিরে মাস খানেক ধরে ঝড় উঠেছে সমাজ মাধ্যমে। অনির্বাণের সেই গানের মধ্যেই উঠে আসে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। এমনকি কুণাল ঘোষ, দিলীপ ঘোষ থেকে শতরূপ ঘোষের নাম সেখানে ব্যবহার হয়েছে। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর পেনশন, হিন্দু রাষ্ট্রের বিতর্ক, কমিউনিস্টদের সঙ্গে কুকুরের তুলনা, আচ্ছে দিন-এর মতো সংবেদনশীল প্রসঙ্গও গানের কথায় রয়েছে। একাংশের মতে এটা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক, তবে অনেকেই কড়া ভাষায় বিরোধিতাও করেছেন।

এই গান নিয়েই আসল বিতর্ক তৈরি হয়েছে অনির্বাণের রাজনৈতিক নয়, বরং ধর্ম নিয়ে করা বক্তব্যকে ঘিরে। তিনি মঞ্চে বলেছিলেন, সনাতন ধর্ম এখনও পুরোপুরি পৌঁছায়নি ভারতে, বরং তা এলে দেশকে পিছিয়ে যেতে হবে। ঠিক এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন অভিনেতা-রাজনীতিবিদ রুদ্রনীল ঘোষ। সমাজ মাধ্যমে তিনি সরাসরি অনির্বাণকে লিখেছিলেন, এমন কথা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আঘাতমূলক। তাঁর দাবি, অন্য কোনও ধর্ম সম্পর্কে একই মন্তব্য করলে অনেক বড় সমস্যার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

রুদ্রনীল আরও অভিযোগ তুলেছিলেন, শিক্ষা দুর্নীতি কিংবা চিকিৎসক হ’ত্যার মতো বড় সামাজিক ইস্যুতে তাঁর মুখ না খোলা নিয়ে। তবে কেবল সমালোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি রুদ্রনীল। তিনি প্রকাশ্যে অনুরোধ করেছিলেন অনির্বাণকে যেন তিনি নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন বা প্রয়োজনে ক্ষমা চান। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অনির্বাণ ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, বরং গোলাপী ফ্যাসিবাদের ব্যাখ্যা দিয়ে বিকৃত মানসিক অবস্থার অভিযোগ তোলেন। এরপর আর চুপ করে থাকলেন না রুদ্রনীল ঘোষ। এবার প্রকাশ্যে এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিমত স্পষ্ট করলেন তিনি।

এদিন তিনি বললেন, “দু’দিনের জনপ্রিয়তা পেয়েই সেটার দুর্ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। জনপ্রিয়তার সঙ্গে দায়িত্বও আসে, সেই দায়িত্ববোধটা বুঝে প্রতিটা পদক্ষেপ নিতে হয়। কবিতা আমিও লিখি, সেটা বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়। আমি তো করি না, মানুষ করে ভাইরাল। সেখানে আমিও বিরোধীদের নিয়ে নানান তির্যক মন্তব্য করি। কিন্তু সরাসরি কারোর নাম নিয়ে ছোট করা প্রতিবাদ হতে পারে না। আমার ভাইটি টলিউডের হুলিগানদের জন্য কাজ না পেয়ে গানকে পেশা বানিয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক এটা, তাহলে গানে রাজনীতির প্রসঙ্গ না এসে তাদেরকে নিয়েই প্রতিবাদ হোক। রাজ্যে এত খারাপ ঘটনা ঘটছে, সেগুলো নিয়ে গান লিখুক।

আরও পড়ুনঃ শো করতে গিয়ে মাত্র ৫২’তে শেষ হলো পথ চলা! কীভাবে জলে ডুবে মা’রা গেলেন গায়ক জুবিন গর্গ? সামনে এলো আসল কারণ

প্রাক্তন শাসক দলকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা, প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনা– এসব কখনওই কাম্য নয়। সবথেকে বড় কথা, ভাই বলেছে যে সনাতন হওয়া মানে পিছিয়ে যাওয়া। আমি বলব সনাতন ছিল বলেই, এমন সব মন্তব্য করেও সে বেঁচে গেল। আজ যদি সনাতনী আর্যভট্ট শূন্য আবিষ্কার না করত, তাহলে আয়ের হিসেব রাখতেও পারতো না। সনাতন মানুষকে উগ্র চিন্তা থেকে মুক্ত করে, অন্যদের মতো কাটাকাটি আর মারপিট শেখায় না। একটু পড়াশুনা করে গান বানানো উচিত।” তাঁর মতে, যদি অজ্ঞতার কারণে বলা হয়, তাহলে সনাতন সমাজ ক্ষমা করতে প্রস্তুত। কিন্তু যদি সচেতনভাবে বলা হয়, তবে দায় স্বীকার করতেই হবে। রুদ্রনীলের কথায়, সনাতন ধর্ম চিরন্তন— মানুষ আসবে যাবে, কিন্তু তার অস্তিত্ব অক্ষত থাকবে।