৮৫ বছরের বৃদ্ধ আজ নিঃস্ব, অভিশাপের জীবন কাটাচ্ছেন জুবিন গর্গের বাবা মোহিনী মোহন বরঠাকুর! বাবা বেঁচে থাকাকালীন দুই সন্তানের মৃ’ত্যু! প্রথমে অকালেই মেয়েকে, তারপর স্ত্রীকে, এবার ছেলেকেও হারিয়ে– নিঃসঙ্গতার ভারে মৃ’ত্যুমুখে দাঁড়িয়ে তিনি!

ভারতীয় সংগীত জগত এই মুহূর্তে শোকে স্তব্ধ, কারণ জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জুবিন বরঠাকুর, ওরফে ‘জুবিন গর্গ’ (Zubeen Garg) আর নেই। মাত্র ৫১ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে অকালমৃ’ত্যু হয়েছে তাঁর। খবর আসার পর থেকেই শুধু আসাম নয়, সমগ্র দেশ শোকে ডুবে আছে। বিমানবন্দরে যখন কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছাতেই, স্ত্রীর ভেঙে পড়া আর ভক্তদের কান্নাই প্রমাণ করে দিল— তিনি কেবল একজন শিল্পী নন, তিনি ছিলেন আবেগের নাম।

কিন্তু এই শোকের আবহে আরও গভীর এক করুণ কাহিনি লুকিয়ে আছে তাঁর পরিবারে। জুবিনের বাবা ‘মোহিনী মোহন বরঠাকুর’ (Mohini Mohon Borthakur), যিনি পেশায় ছিলেন আসাম সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা, আজ প্রায় মৃ’ত্যুপথযাত্রী। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাঁকে একে একে হারাতে হয়েছে মেয়ে, স্ত্রী আর ছেলে— তিনটি সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে। ৮৫ বছরের এই মানুষটি শুধু প্রশাসনিক কাজেই নয়, কবি ও গীতিকার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

তিনি লিখতেন ‘কপিল ঠাকুর’ নামের ছদ্মনামে। অথচ জীবনের অন্তিম অধ্যায়ে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন এক অসম্ভব শূন্যতার সামনে। তাঁর জীবনের প্রথম বড় আঘাত আসে তিন বছর আগে। কনিষ্ঠ কন্যা জঙ্কি, যিনিও সঙ্গীতে ছিলেন খুব দক্ষ, এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। ২০২২ সালে একটি শোয়ে যাওয়ার পথে ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক ঘটনা। প্রিয় মেয়েকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন মোহিনী মোহন। তার কিছু দিনের মধ্যে আবার চলে যান স্ত্রী ইলি বরঠাকুর।

পরিবারে একের পর এক শূন্যতা তাঁকে আরও নিঃসঙ্গ করে তোলে। ছেলে জুবিন তখন দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করছেন। গানের পাশাপাশি অভিনয়, সুরসৃষ্টি, চলচ্চিত্র— একাধিক ক্ষেত্রে তিনি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছিলেন। কিন্তু বোন আর মাকে হারানোর পর মা’দকের নেশায় জড়িয়ে পড়েন জুবিন। সেই কঠিন সময়েও তিনি গানের জগতে অগাধ জনপ্রিয় ছিলেন। আর আজ সেই ছেলেকেও বিদায় নিতে হলো এত অকালেই। স্বাভাবিকভাবেই এই ধাক্কা আর সহ্য করতে পারছেন না তাঁর বৃদ্ধ বাবা।

আরও পড়ুনঃ রেডিয়ো-ক্যাসেট যুগ শেষ, ইউটিউব–ইয়ারফোনে বাজে বর্তমানে গানের নতুন সুর! এর মধ্যেই কি হারিয়ে যাচ্ছে পুজোর গানের চিরচেনা আবেগ? সত্যিই কি কমে গেছে শ্রোতার আগ্রহ—কি বলছেন রাঘব চট্টোপাধ্যায় এবং জোজো?

গুয়াহাটির বাড়িতে ছেলের ম’রদেহ যখন আনা হয়, তখন নি’থর দেহের পাশে বসে থাকা অসুস্থ মোহিনী মোহনের ছবি যেন আরও এক বেদনাময় ইতিহাস লিখে রাখল। এক জীবনে এত প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা বোধহয় ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একসময় যিনি কবিতা লিখতেন, মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতেন, সেই মানুষ এখন নিজের জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শুধু একটাই প্রশ্নের মুখোমুখি— ভাগ্য কেন এত নির্মম হলো তাঁর সঙ্গে।