শহর জুড়ে জলমগ্নতার কাহিনি নতুন কিছু নয়, কিন্তু এ বার তার মাশুল গুনতে হল অভিনেত্রী দোলন রায়কে। বাইপাস সংলগ্ন এক আবাসনের ভেতরে দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তিনি ও তাঁর স্বামী, প্রবীণ অভিনেতা দীপঙ্কর দে। ঠিক সেখানেই ঘটে গেল এক চরম দুঃস্বপ্ন। এক রাতের প্রবল বৃষ্টিতে গাড়ি জলের তলায়, আর সেই গাড়ির ভেতরে ডুবে গেল দোলনের বহু বছরের গচ্ছিত সামগ্রী, কাগজপত্র, এমনকি পুজোর জন্য কেনা উপহারও।
দোলনের কথায়, তাঁর গোটা সংসারটাই যেন আটকে ছিল ওই গাড়ির ভেতর। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, শুটিংয়ে ব্যবহার করা নিজের পছন্দের শাড়ি, এবং আসন্ন দুর্গাপুজোয় প্রিয়জনদের হাতে দেওয়ার জন্য যত্ন করে বাছা উপহার—সবকিছুই এক রাতের জলে ভেসে গেল। অভিনেত্রীর আক্ষেপ, “গাড়িটা মনে হচ্ছে আর ঠিক হবে না। কাগজপত্র, শাড়ি, উপহার—সব শেষ। মন খারাপ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।”
প্রশ্ন উঠছে, এ শহরে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই যদি এই দশা হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হচ্ছে? দোলন রায় তো অন্তত সংবাদমাধ্যমের দৌলতে তাঁর যন্ত্রণা শোনাতে পারছেন, কিন্তু বাকিরা? কাগজপত্র হারালে নতুন করে তুলতে হয় কতখানি ঝক্কি, তা শহরের প্রত্যেকেই জানে। কিন্তু এ যেন কারও চিন্তাই নয়।
সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে পুজোর প্রস্তুতিতে। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, এবারের পুজোয় তিনি বিচারক হিসেবে ঘুরবেন একাধিক মণ্ডপে। সেই তালিকায় রয়েছে এক অভিনব উদ্যোগও—যেখানে বিচারকের আসনে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। অর্থাৎ মানুষের পক্ষপাতহীন রায়ের সঙ্গে মেশানো হবে মেশিনের নিরপেক্ষতা। কিন্তু দোলনের সংশয়, আদৌ তিনি এ বছর ওই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না। তাঁর গলায় স্পষ্ট শঙ্কা, “এক রাতে সব over হয়ে গেল। এখন আর কিছু বোঝার উপায় নেই।”
তবে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে আরও বড় এক প্রশ্ন। কলকাতার মতো শহরে বারবার কেন এই জলজটের সমস্যা হচ্ছে? কোটি কোটি টাকা খরচ হয় ড্রেনেজ সিস্টেমে, নালা সংস্কারে, কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় না। শহরের সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে এবার ভুক্তভোগীর তালিকায় নাম জুড়ল তারকা দোলন রায়েরও। আর তাতেই আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে পুরসভা ও প্রশাসনের ব্যর্থতা।
সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই এই নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে। কেউ বলছেন, “তারকা বলে খবর হচ্ছে, সাধারণ মানুষ রোজ এই ভোগান্তির শিকার।” আবার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, “কেন প্রতিবার বর্ষায় গাড়ি, বাড়ি, সম্পত্তি ডুবে যায়? প্রশাসন কি শুধু পুজোর আলো ঝলকানি নিয়েই ব্যস্ত?”
দোলনের ব্যক্তিগত ক্ষতি নিঃসন্দেহে বড়, কিন্তু এর বাইরে এ ঘটনায় ধরা পড়ল এক শহরের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থার চিত্র। তাঁর আক্ষেপে যেন প্রতিফলিত হচ্ছে হাজারো সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস। পাম্প বসিয়ে জল নামানোর চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কতটা ফল হবে, তা নিয়ে সংশয়ে সবাই।
এক কথায়, দোলন রায়ের ক্ষতি ব্যক্তিগত হলেও এর প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। তাঁর শাড়ি, কাগজপত্র, পুজোর উপহার হয়তো ফেরানো যাবে না, কিন্তু এই ঘটনা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে শহরের প্রশাসনের দিকে। কেন বারবার নাগরিকরা একই দুরবস্থার মুখোমুখি হন? আর কত দিন বৃষ্টির দোহাই দিয়ে দায় এড়ানো হবে?
আরও পড়ুনঃ দুর্যোগের দিনেও বন্ধ রাখা হল না শুটিং! জলমগ্ন কলকাতার রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রইলেন শ্রুতি দাস! কিন্তু শেষমেশ কী উপায়ে শুটিং ফ্লোরে পৌঁছলেন অভিনেত্রী?
দোলনের কণ্ঠে হতাশা, শহরের বুকেই নতুন করে বিতর্ক—কলকাতা কি সত্যিই প্রস্তুত একটানা বৃষ্টির ধকল সামলাতে? নাকি প্রতিবারের মতো এ বারও ক্ষোভ চাপা পড়বে আলোর রোশনাই আর উৎসবের উল্লাসে?