Tathagata Mukherjee: থিম পুজোর চাকচিক্যে পুজোর আমেজ হারিয়ে ফেলেছে কলকাতা! আক্ষেপ অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মুখার্জির! Exclusive আড্ডায় শেয়ার করলেন পাড়ার পুজোর একান্ত স্মৃতি

মহালয়ার সকাল থেকেই ব্যস্ততা তাঁর। সিঙ্গেল শট মুভি “গোপনে মদ ছাড়ান”- এর নির্মাণ পরবর্তী কাজ নিয়ে সকাল থেকে চলছে ভাবনা চিন্তা এবং কাজ। কারণ পুজোর আগে শেষ করতেই হবে। তাহলে কি পুজোর পর দর্শকদের এটাই উপহার দিতে চলেছেন টলিউড অভিনেতা এবং সদ্য হয়ে ওঠা পরিচালক তথাগত মুখার্জি?

পুজোর প্ল্যান নিয়ে অভিনেতার সঙ্গে একান্ত আলাপ, আলোচনা হলো আমাদের। ফিরে গেলেন ফ্ল্যাশব্যাকে। পরিচালক জানালেন গোপনে ম’দ ছাড়ান সিনেমাহল কিংবা ডিজিটাল পর্দায় রিলিজ করবে কিনা সেটা সম্পূর্ণই প্রযোজকের চিন্তা। এরপরেই সরাসরি জানতে চাইলাম তথাগতর এবারের বিশেষ পুজোর প্ল্যান। অভিনেতা জানালেন গত আট-নয় বছর ধরে পুজোর সময়টায় কলকাতার বাইরে কাটান তিনি। এর কারণ হলো অভিনেতার মনে হয় এখন থিম পুজোর দাপটে কলকাতার পুজোর আমেজ পুরোটাই পাল্টে গেছে। এখন বিজ্ঞাপন বা দেখনদারির বেশি আধিপত্য। এই পরিবেশটা ঠিক পছন্দ নয় তাঁর।

গ্রামের পুজোর আড্ডা মারা, গল্প, খাওয়া-দাওয়া, ঠাকুর দেখা এইগুলো এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না শহরে। সেটা বাঁচিয়ে রেখেছে শুধু গ্রাম। এখন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দর্শন আর হয় না, হয় প্যান্ডেল হপিং, পুজো প্ল্যান আর রয়েছে পুজোর সময়ের রাস্তাঘাটের ভয়াবহতা। তার উপরে পুজোর খাওয়া-দাওয়ার সময়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁগুলির গুণগতমান এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে মুখে দেওয়ার যোগ্য থাকে না, দাবি অভিনেতার। সবমিলিয়ে বড় বড় বিজ্ঞাপন আর হোর্ডিং- এর মাঝে থাকতে ভালো লাগে না তাঁর।

কথায় কথায় স্মৃতিচারণা করলেন ছোটবেলার পুজোর, পুজোর প্রেমের। অভিনেতা আলমবাজারে মানুষ হয়েছেন। সেখানকার বারোয়ারি পুজোয় প্যান্ডেল তৈরি করা থেকে উৎসব শুরু হয়ে যেত। পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে ঠাকুর আনা, বাসে করে ঠাকুর দেখা, বন্ধুরা মিলে হৈ হুল্লোড় করা সমস্তটাই এখন মিস করেন তিনি। সেই সময় থিম পুজোর উন্মাদনা চালু হয়নি। ভিআইপি পাস দিয়ে ঠাকুর দেখা ছিল না। তারপরেই অভিনেতা হারিয়ে গেলেন ছোটবেলার রোমাঞ্চে ভরা স্মৃতিতে।

পাড়ার সুন্দরী মেয়েদের অথবা বন্ধুদের বোনদের সঙ্গে গানের লড়াই খেলা বা দশমীতে অজানা কেউ এসে হঠাৎ করে গালে সিঁদুর লাগিয়ে দিল, টুক করে ভিড়ের মধ্যে হাতটুকু ধরা- সেই টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো আজও আলোড়ন তোলে তথাগতর মনে।

অভিনেতা ছোট থেকেই মূর্তিপুজোর বিরোধী। তবে তার মানে এটাও নয় যে তিনি ঠাকুরে বিশ্বাস করেন না। অষ্টমীর অঞ্জলি, দশমী অভিনেতার কাছে ততটাই কাছের যতটা ভিড়ের মাঝে কারুর হাতে ছুঁয়ে যাওয়া বা ফুল দেওয়ার সময় অচেনা কারুর হাতে হাত লেগে যাওয়া। ধুপ-ধুনোর গন্ধে যে সুন্দর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সেটাই অভিনেতার কাছে পুজোর মাহাত্ম্য। পুজোতে আনন্দটাই তাঁর কাছে আসল।

বন্ধুদের আলিঙ্গন করতে পারাটাই আনন্দ তাঁর কাছে। সম্পূর্ণটাই তখন ছিল ছুটির আমেজ। এখন আর ছুটি পাওয়া যায় না। এখন কলকাতার পুজোয় ছুটি নেই। আগে সেটা ছিল ছুটির উদযাপন। অভিনেতা মনে করে বললেন ২০০৫- এর পর থেকে থিম পুজো শুরু হল। কসবা বোসপুকুরের থিম পুজোই ছিল প্রথম থিমের পুজো যেখানে করা হয় চায়ের ভাঁড়ের প্যান্ডেল। ২০১০ সালের পর থেকে থিম পুজোর উন্মাদনা সৃষ্টি হল কলকাতার বুকে। তারপরেই আয়োজনের আড়ম্বর এলো।

তবে এই পরিবর্তনের বিরোধী নন তথাগত মুখার্জি। তিনি প্রতিযোগিতার বিরোধী। ছুটির যে আমেজ, বন্ধুরা মিলে পিছুটানহীনভাবে আনন্দ সেটাই মিসিং।

প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যাওয়ার তাড়া, ভিড়ের মধ্যে ঠাকুর দেখা এবং তারপর সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার তাড়াহুড়ো এটাই তাঁর কাছে বড় বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনে হয়। তথাগত মনে করেন কলকাতায় যারা আদি পুজো দেখেছে তাদের কাছে এখন আর এই পুজো আনন্দের নয়। তবে যারা গ্রাম থেকে বা মফস্বল থেকে দেখতে আসছে তাদের কাছে এখন এটা একটা আলাদা উন্মাদনার পর্যায়ে চলে গেছে।

প্রাক্তন দেবলীনা দত্তকে ছাড়া অভিনেতার এটা প্রথম পুজো। তিনি বললেন জীবন নিজের মত রাস্তা খুঁজে নেয়। অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তর স্কুল জীবনের প্রথম প্রেমিক ছাড়া এটা কত নম্বর পুজো অথবা তথগতর প্রথম প্রেমিকা ছাড়া এটা কত নম্বর পুজো সেটা তো আর মনে করা যায় না। পুজোর সময়ে দেবলীনা নিজের মতো ঘুরবেন আর তথাগত থাকবেন শহর থেকে দূরে নিজের মতো করে।

সাক্ষাৎকার: তিতলি ভট্টাচার্য