আমার জীবনে অনুপ্রেরণা মা-বাবা, আমি ওদের মতোই হতে চাই, মায়ের পায়ের কাছে কিছুক্ষণ বসলেই ক্লান্তি ঘুচে যায়, নতুন করে সাহস ফিরে পাই! খোলামেলা স্বীকারোক্তি দিব্যজ্যোতির

ছোট পর্দায় তাঁকে ‘সূর্য’ নামেই এখন সকলে চেনেন, সেই ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র (Anurager Chhowa) সূর্য ওরফে ‘দিব্যজ্যোতি দত্ত’ (Dibyojyoti Dutta) আজ আর শুধু টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতাই নন, ধারাবাহিকে দীর্ঘদিন ধরে নিজের অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে এবার তাঁর সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ—চলচ্চিত্রের জগতে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন তিনি, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ (Lawho Gouranger Naam Re) তে ‘চৈতন্য মহাপ্রভু’র চরিত্রে অভিনয় দিয়ে। এই ঐতিহাসিক চরিত্র তুলে ধরতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন অভিনেতা?
ছবির চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই নিজ শরীর ভাঙা ও গড়া শুরু করেছেন দিব্যজ্যোতি। বহুদিন ধরে শরীরচর্চার মাধ্যমে গড়ে তোলা পেশিকে এবার খানিকটা কমাতে হচ্ছে। কারণ চৈতন্যের ত্যাগী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে তাঁর শরীরেও আনতে হবে পরিবর্তন। তাই আগের ‘মাসল বিল্ডিং’ অনুশীলনের বদলে এখন বেশি জোর দিচ্ছেন কার্ডিও এবং হাই ইন্টেনসিটি ট্রেনিংয়ে। শরীরচর্চার এই বদল মানে শুধু ফিটনেসের দিক থেকে নয়, মনের দিক থেকেও তৈরি হওয়া।
শুধু শরীরচর্চা নয়, দিব্যজ্যোতির খাদ্যাভাসেও এসেছে বড়সড় বদল। ওজন কমাতে ক্যালোরি ঘাটতি বজায় রাখতে হচ্ছে, দিব্যজ্যোতি নিজেই এদিন এক সাক্ষাতকারে বললেন, “এখন যা খাচ্ছি তার থেকে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি বার্ন করছি। জানুয়ারির শুরুর দিকে আমার ওজন ছিল ১০৫, সেখান থেকে আজ ৮৮ আর এবার আরও কিছুটা কমতে হবে। আগে দিনে চার থেকে পাঁচবার খাওয়ার খেতাম, সেখানে এখন দেড়বার খাওয়ার খাই।”
দিব্যজ্যোতি বলেন পরিবারের কাছ থেকে তিনি অনেকটা সাপোর্ট পাচ্ছেন এই বিষয়। তিনি বলেন, “আমি খাইনা বলে আমার বাড়ির কেউ খায়না, সবাই রোগা হয়ে গেছে। এমনকি মা অর্ধেকদিন রাতে খাওয়ার না খেয়েই শুয়ে পড়েন। শুধু তো আর শারীরিকভাবে নিজেকে গড়ে তুললেই হবে না, মানসিক দিকটাও সেরকম হতে হবে। এই বিষয়ে পরিবারের থেকে অনেক কিছু শিখছি।” প্রসঙ্গত দিব্যজ্যোতি বলেন তিনি বরাবরই যেকোনও চরিত্র নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন। যেমন ‘জয়ী’ ধারাবাহিকে যখন অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭।
কিন্তু চরিত্রের বয়স ছিল ২৬, সেই জন্য তিনি সেই বয়সী মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা করতে তাদের আচার-আচরণ বোঝার জন্য। এমনকি অনুরাগের ছোঁয়াতে ডাক্তারের চরিত্র করতে হবে জেনে, তিনি ডাক্তারের কাছ থেকে রোগী দেখার নির্দিষ্ট কিছু ধরন ও পদ্ধতি শেখেন। এবারও নিজেকে গড়ে তুলতে বই পড়া ও আশপাশ থেকে তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছেন। জীবনের রোল মডেল হিসেবে দিব্যজ্যোতি নিজের মা-বাবাকে মনে করেন। অভিনেতা বলেন, “ছোট থেকে দেখে এসেছি বাবা প্রতিমাসে বেতনের টাকার কিছু অংশ একটা চেক লিখে ডোনেট করেন চুপিসারে।
একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করতে বাবা বলেছিলেন আমি করি বলেই তোমাকে করতে হবে এমনটা নয়, এটা শুধু যার জন্য এই পাওয়া তাঁকেই কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়ার পদ্ধতি। এমনকি মাও বলেন দীর্ঘদিন ধরে যখন খারাপ সময় চলে, তার মানে সবকিছু ভালো হওয়ার আগে মুহূর্ত এটা! অন্ধকার রাত শেষ হয়েই তো সকাল আসে।” বিভিন্ন চরিত্রের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে ভাঙা ও গড়া মধ্যে কখনও কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি।

আরও পড়ুনঃ বিচ্ছেদ! তৃণাকে রেখেই শহর ছাড়লেন নীল! কী কারণে শহর ছাড়লেন অভিনেতা? ছাড়াছাড়ি উস্কে দিচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের গুঞ্জনকে!

এমনকি তৈরি হয় নিজের প্রতি অনাস্থার জায়গা। তখন তিনি মায়ের কাছেই প্রশান্তি খুঁজে পান। দিব্যজ্যোতির কথায়, “মা পছন্দ করেন না, কিন্তু মায়ের পায়ের সামনে বসে থাকি বেশ কিছুক্ষণ। তারপরে আস্তে আস্তে ভালো লগতে শুরু হয়, সব দ্বন্দ্ব ঘুচে যায়।” এই সবের মাঝেই টেলিভিশনের নিয়মিত শুটিং চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে। বলা যায়, একই সঙ্গে ছোট পর্দা ও বড় পর্দার ভারসাম্য বজায় রেখে নিজের নতুন পরিচয় গড়ে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন অভিনেতা।