আজ বাদে কাল বোধন, ঢাকে কাঠি পড়তেই আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে পুজোর আমেজ। তবে, বাঙালির শারদীয়ার (Durga Puja) সূচনা কিন্তু হয়ে যায় মহালয়ার সকাল থেকেই। এই মহালয়া মানেই তো চণ্ডীপাঠ আর সেই চিরচেনা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর। তবে সময় বদলেছে, এখন শুধু রেডিও নয়, টেলিভিশনের পর্দাতেও ধরা দেয় দেবীর অসুর বধের আখ্যান। সেই ধারাতেই এবার টেলিভিশনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে এক নতুন চমক হিসেবে উঠে এলেন বড়পর্দার অভিনেত্রী ‘কৌশানি মুখোপাধ্যায়’ (Koushani Mukherjee)। দেবীরূপে তাঁর এই প্রথম অভিনয়, আর তাতেই তিনি নজর কেড়েছেন দর্শকদের।
কৌশানি এইবার অভিনয় করেছেন স্টার জলসার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে ভদ্রকালীর চরিত্রে। গলায় জবা ফুলের মালা, এলোমেলো চুল, কপালে তৃতীয় নয়ন, গগনচুম্বী মুকুট, র’ক্তবর্ণ চোখ আর হাতে অস্ত্র— মা কালীর রুদ্ররূপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল দৃঢ়। যদিও চরিত্রটি পেয়ে শুরুতে বেশ নার্ভাস ছিলেন তিনি, তবুও নিজের শক্তির উৎস হিসেবে ভরসা রেখেছেন মা কালীর উপর। তাঁর নিজের ভাষায়, “হাত জোড় করে প্রার্থনা করছিলাম যে, মা হয় আমায় শক্তি দাও। না হলে আমার উপর ভর করো, যাতে আমি তোমার রুদ্ররূপ ফুটিয়ে তুলতে পারি।
কিছুটা হয়তো পেরেছি, বাকিটা দর্শকরাই ভালো বলতে পারবেন।” কৌশানির এই বিশ্বাস এবং অনুভবই নাকি তাঁর অভিনয়ে আলাদা একটা পরিপক্বতা এনে দিয়েছে। প্রসঙ্গত, ছোটবেলা থেকেই মা কালীর প্রতি তাঁর ভক্তি ছিল গভীর। এমনকি আজও প্রতিদিন যে কোনও পরিস্থিতিতে মাকে স্মরণ করেন তিনি, এবং প্রতিবছর নিষ্ঠা করে দীপান্বিতা অমাবস্যায় পুজোও করেন। তাই এই চরিত্র পাওয়া শুধুমাত্র একটি অভিনয়ের সুযোগ নয়, বরং তার কাছে একান্তভাবেই আত্মিক অভিজ্ঞতা। তাঁর মতে, এই চরিত্র পাওয়া যেন মা কালীরই ইচ্ছা।
তিনি বলেন, চরিত্রটি পাওয়ার পর একরকম দায়বদ্ধতাও তৈরি হয়। কারণ দেবী মানেই শক্তি, সংযম আর ন্যায়ের প্রতীক। এই প্রথমবার মহালয়ার অনুষ্ঠানে অভিনয় করলেও কৌশানির আত্মবিশ্বাস ও উপস্থিতি একেবারেই নতুন মনে হয়নি। কোয়েল মল্লিক যেখানে এর আগে দু’বার মহালয়ায় দেবী দুর্গা রূপে অভিনয় করেছেন, তাঁর পাশাপাশি সেখানে কৌশানির এই প্রথম অভিষেক দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে কৌশানি বলেন, আগে তিনি অনেক সময় রেগে যেতেন, আবেগে ভেসে যেতেন। কিন্তু এখন তিনি জানেন কোথায় ঠিক কতটা প্রতিক্রিয়া দেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ শেষ সপ্তাহে টিআরপি তালিকায় বাজিমাত জি বাংলার! ‘পরশুরাম’-এর সিংহাসনে ভাগ বসালো ‘পরিণীতা’! জগদ্ধাত্রী ফিরে পাচ্ছে হারানো গতি, ‘ফুলকি’ আর ‘চিরদিনিই’র ঝড়ে তালিকা থেকে ছিটকে গেল ‘রাঙামতি’!
মা কালীর আশ্রয়ে আসার পর থেকেই তাঁর এই পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি। কৌশনি মনে করেন, সমাজের অসুর কখনও মরে না। একটা অশুভ শক্তির বিনাশ হলে আরেকটা উৎপত্তি হয়। তাই বারবার বিভিন্নভাবে মা দুর্গা এবং কালীকে আসতে হয় তাদের শাস্তি দিতে। তিনি মনে করিয়ে দেন, আজকের সমাজে একজন নারীকে শুধু মৃদু, শান্ত লক্ষ্মী নয়, প্রয়োজনে কালী রূপেও আবির্ভূত হতে হয়। তাঁর মতে, “আজকের দিন দাঁড়িয়ে মেয়েদের স্পষ্ট কথা বলার ক্ষমতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। নিজের জন্য লড়তে জানতে হবে, মা দুর্গা প্রতিটা নারীর মধ্যেই থাকে। তাই প্রতিটা নারীই এক একটা মা দুর্গা, যে সমাজের প্রতিটা অসুরকে বিনাশের ক্ষমতা রাখেন।”