প্রায় অর্ধশতাব্দী হতে চললো তিনি নেই। কিন্তু আজও তার গানের গলা, তার গায়কী তার পরিচয় হয়ে থেকে গেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে তিনিই হতে পারতেন শতাব্দীর অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী। প্লেব্যাক ইন্ডাস্ট্রিতে এক স্বতন্ত্র ঘরানার জন্ম দিয়েছেন এই মহিলা সংগীতশিল্পী।
যাকে নিয়ে এতক্ষন কথা বললাম তিনি হলেন গীতা দত্ত। হিন্দি ও বাংলা সিনেমায় তো বটেই মারাঠি, গুজরাতি, পাঞ্জাবিসহ আরো কিছু ভাষায় নিজের অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। শচীন কর্তা থেকে হেমন্ত কুমার সব প্রতিভাতেই তিনি ছিলেন উপযুক্ত মানানসই। তবুও থমকে দাঁড়াতে হয়েছিল তাকে।

একান্তই ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা অতিষ্ঠ করে তুলেছিল এই বাঙালি সঙ্গীতশিল্পীকে। কিন্তু মনের জোরে ঠিক যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি ঠিক তখনই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এই অনন্য প্রতিভা, সেটাও আবার মাত্র ৪১ বছর বয়সেই। এমন কী ঘটেছিল এই গায়িকার জীবনে?

১৯৭২ সালের জুলাইয়ে মৃত্যু এসে থামিয়ে দিয়েছিল গীতা দত্তর গলা। আজকে আপনাদের এই গায়িকার এক চরম কষ্টের গল্প বলবো ও জানাবো। এটা জানলে অবশ্যই আপনারাও কেঁদে ফেলবেন।
হিন্দি ছবির বাজির জন্যে রেকর্ডিংয়ের সময়ে বিখ্যাত চিত্র পরিচালক গুরু দত্তের সঙ্গে প্রথম দৃষ্টি বিনিময়। ছাদনাতলায় শুভদৃষ্টি ২৬ মে ১৯৫৩। নতুন আশায় বুক বেঁধে সংসার শুরু করেন গীতা। স্বামী গুরু দত্তের ছবিতে গানই ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ এক চরিত্র। তাই বিয়ের কিছু দিন পরেই নিজের হোম প্রোডাকশন ছাড়া স্ত্রীর অন্যত্র গাওয়া নিষিদ্ধ করার পরে জন্ম নিয়েছিল অবিস্মরণীয় কিছু গান। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে গুরু দত্তের শর্ত শিরোধার্য করেও সুরকাররা ঠিক একটি করে গান গীতার জন্য তুলে রাখছিলেন। কিন্তু সংসার ও সন্তানকে অগ্রাধিকার দেওয়া স্বামী ভুল বুঝলেন স্ত্রীকে। সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে গুরু দত্তের মনে।

হুল্লোড়প্রিয় গীতার মন জুড়ে তখন মানসিক অবসাদ। অপরদিকে স্বামীও হয়ে পড়েন অবসাদগ্রস্ত। এই অবস্থায় দুজনেই প্রবল সুরাসক্ত হয়ে পড়েন বাধ্য হয়ে। প্রথমে বিবাহবিচ্ছেদ এবং এরপর ১৯৬৪ সালে মহাপঞ্চমীর দিন গুরু দত্তের জ্বলন্ত চিতায় যেন গীতার মানসিক শক্তি ও স্নায়বিক চেতনার অনেকখানি পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে দীর্ঘ এক বছর নিজের তিন সন্তানকে চিনতে পারেননি তিনি।
অবশেষে নিজেকে ঠিক রাখতে গানে ডুবতে চাইলেন। কিন্তু ফিল্মি দুনিয়ার স্বার্থপরতা তাকে আর জায়গা দিল না। শেষে আবার ধরলেন সুরাপান। অর্থের অনটন দূর করতে সেই সময়ে কলকাতার মঞ্চে গীতা প্রচুর অনুষ্ঠান করতেন। বাংলা ছবি ‘বধূবরণ’-এ অভিনয়ও করেছেন টাকার জন্যেই। শেষের দিকে হাসপাতালে প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক চিকিৎসার ফাঁকেই নায়িকার কণ্ঠে নিজের গলা দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফল শরীর জানান দিচ্ছিল আগাম শেষ হওয়ার কথা। প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়েও রেকর্ডিংয়ে তিনি কী ভাবে একের পর এক অবিস্মরণীয় গান গেয়ে গিয়েছেন সেটা শুধু তিনিই হয়তো বলতে পারবেন। ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই, তার মুখ থেকে সে দিন সুরের বদলে বেরিয়ে এসেছিল শুধু রক্ত। কাজে লাগলো না আর কোনো চিকিৎসা।






‘একই লোকের সঙ্গে দশ বছর সংসার, সুস্থ মানুষ পারে নাকি!’ ‘এতদিন একই স্বামী অসম্ভব, পাগলামির লক্ষণ!’ বিবাহিত জীবন নিয়ে বন্ধু সৌমিলিকে মজার খোঁচা গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর!