“সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব, প্রতিবাদ সেই টুকুর করা উচিত যেটুকু নিজের আয়ত্তের মধ্যে আছে!” সীমাহীন প্রতিবাদ নয়, প্রয়োজন সংযম আর বাস্তববোধের! অকপট অপরাজিতা আঢ্য

এই বছরের শেষ প্রান্তে, অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর মুক্তি পেতে চলেছে নতুন বাংলা ছবি ‘শ্রী দুর্গা’ (Shree Durga)। ছবির নাম শুনলেই এক ধরনের শক্তি, প্রতিবাদ আর আত্মসম্মানের ভাবনা মাথায় আসে। তবে এই দুর্গা কোনও মূর্তির প্রতীক নয়, বরং রক্তমাংসের এক নারী— যিনি জীবনের অন্যায়, অপমান আর যন্ত্রণা থেকে নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলেন। ছবির পরিচালক সন্দীপ সাথী, এবারই প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম পরিচালনা করছেন। দীর্ঘদিন এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বুঝেছিলেন, গল্পটা নারীর চোখ দিয়ে বলার সময় এসেছে।

আর সেই নারীর চরিত্রে রয়েছেন অভিনেত্রী ‘অপরাজিতা আঢ্য’ (Aparajita Adhya), যাকে আমরা এতদিন একেবারে অন্য রূপে দেখে এসেছি। অপরাজিতা এই ছবির চরিত্র নিয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি দ্বিধায় ছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, “গল্পটা শুনেই বুঝেছি এমন চরিত্র আগে করিনি তাই স্বাভাবিকভাবে ভরসা হচ্ছিল না। দর্শক আমাকে এভাবে আগে দেখেনি, তাই তাদের মনের মত করে নিজেকে গড়তে পারব কিনা এটা বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু সন্দীপ আমাকে বলেছিল, আমি না থাকলে এই ছবিটা তৈরিই হবে না। শেষে রাজি হই।”

ছবির মূল চরিত্র এক সাধারণ গৃহবধূ, যার জীবন খুব সাধারণ। কখনও ভালো শাড়ি কেনার আগে তাঁকে সংসারে চিন্তা করতে হয়, সংসার এমনিতেই বহু সমস্যায় জর্জরিত, অথচ মুখ খুলে কিছু বলতে পারে না। কিন্তু একদিন এমন এক ঘটনা ঘটে, যা তার পুরো জীবনটাই বদলে দেয়। এই ঘটনা যে কোনও নারীর জীবনেই ঘটতে পারে, আর সেটাই ছবির বাস্তবতার জায়গা। পরিচালক সন্দীপ জানিয়েছেন, এই গল্প আসলে সেই নারীদের উদ্দেশেই, যারা চুপচাপ অন্যায়ের ভার বইছে, অথচ একদিন নিজের ভেতরের ‘দুর্গা’-কে চিনে নিতে পারে।

সম্প্রতি অভিনেত্রীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আজকের সময়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কতটা জরুরি বা সব অন্যায়ের প্রতিবাদ কি করা যায়? তাঁর উত্তর ছিল অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ও সংযত। তিনি বলেন, “পৃথিবীতে কোনও কিছুই পারফেক্ট নয়, দোষ থাকলে গুন আছে আবার গুণ থাকলে দোষও আছে। তবে আমার মনে হয় পৃথিবীর সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। প্রতিবাদ সেই টুকুর করা উচিত বা প্রয়োজন যেটুকু নিজের আয়ত্তের মধ্যে আছে। আমি কখনোই নিজের সীমা ভুলে প্রতিবাদ করতে যাই না।

অবশ্যই অনেক কিছু খারাপ লাগে দেখলে মনে হয় প্রতিবাদ করা প্রয়োজন কিন্তু সব প্রতিবাদের জন্য উচিত ভাষা আমাদের থাকে না। অনেকেই আছে যারা ফেসবুকে দু-লাইন লিখে নিজেকে খুব বড় প্রতিবাদী মনে করে। প্রথমত তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। বিকৃত মনস্ক এবং চিকিৎসার প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত কয় লাইন লিখে কোনদিনও সাড়া জাগানো সম্ভব না। অবশ্যই আমিও লিখি, কিন্তু সেটা প্রতিবাদের জন্য নয়। প্রতিবাদের জন্য কখনোই সমাজ মাধ্যমকে অস্ত্র করা যথাযথ নয়।”

আরও পড়ুনঃ ‘বড় হিরোইন হয়েছিস যেন, কে চিনবে তোকে.. রিক্সা করেই বেরোবো!’ দিদি স্বস্তিকাকে ধমকে ছিলেন তার বোন! বাবা বিনোদন দুনিয়ায় অসাধারণ হলেও মা ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ গৃহবধূ! তাই আজও মাটিতে পা রেখেই চলতে চান স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

এই বক্তব্যে অপরাজিতার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি সমাজের এক গভীর সত্যও উঠে এসেছে। আজকের দিনে সামাজিক মাধ্যমে “প্রতিবাদ” যেন বাস্তবের প্রতিবাদকে আড়াল করে ফেলছে। ‘শ্রী দুর্গা’ ছবিটা সেই বাস্তব জীবনের নীরব যোদ্ধাদের কণ্ঠস্বর—যারা হয়তো ফেসবুকে কিছু লেখে না, কিন্তু জীবনের মঞ্চে অন্যায়ের সামনে মাথা নত করে না। এক অর্থে, এই ছবিটি কেবল একজন নারীর গল্প নয়, বরং এক মানসিক জাগরণের গল্প— যেখানে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এক ‘দুর্গা’ লুকিয়ে আছে, জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষায়।