রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’-র সঙ্গে সত্তরের দশকের হিন্দি সিনেমার গান—এই অপ্রত্যাশিত মেলবন্ধন ঘিরে এবার উত্তাল ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ (Dance Bangla Dance) -এর মঞ্চ ও দর্শকমহল। সম্প্রতি সম্প্রচারিত এক বিশেষ পর্বে প্রতিযোগী অনুষ্কার সঙ্গে ‘দেবলীনা দত্ত’র (Debolina Dutta) নৃত্য পরিবেশনায় উঠে আসে ‘চণ্ডালিকা’-র গল্প ও চরিত্র, যেখানে আনন্দের ভূমিকায় ছিলেন দেবলীনা নিজেই। তবে ‘আঁধি’ সিনেমার গান সেখানে জুড়ে দেওয়া দেখে ক্ষুব্ধ দর্শক!
একদিকে দেবলীনার গেরুয়া বসন ও ন্যাড়া মাথার ‘বৌদ্ধ সন্ন্যাসী’ রূপ যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি তাঁর পরিবেশনায় হিন্দি গানের ব্যবহার দেখে অনেকেরই চোখ কপালে। দর্শকের একাংশ তো সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে, আদৌ কি এই প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথের রচনাগুলির মর্ম বুঝছে? দেবলীনার দাবি, তিনি বহুবার ‘চণ্ডালিকা’ মঞ্চস্থ করেছেন এবং এই নাট্যকর্ম তাঁর হৃদয়ের খুব কাছের। তাঁর মতে, আনন্দ ও প্রকৃতির প্রেমের রসায়নই ছিল রবীন্দ্রনাথের লেখার মূল অভিপ্রায়।
তাই প্রেমিক আনন্দকে কেন্দ্র করেই তিনি এই পরিবেশনার ভাবনা সাজিয়েছেন। তবে সবথেকে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ‘আঁধি’ ছবির বিখ্যাত গানের প্রয়োগ। অনেকে একে বলছেন ‘অপসংস্কৃতি’র প্রবেশ, আবার কেউ কেউ একে ফিউশনের নামে রবীন্দ্রনাথের মৌলিকতার বিকৃতি বলে কটাক্ষ করছেন। অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মালবিকা সেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ আমাদের মননে আছেন। সেখানে হিন্দি গানের অনুপ্রবেশ চলবে না। এটা সংস্কৃতির অপমান।”
দেবলীনার পাল্টা বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথ নিজেই নানা সংস্কৃতির প্রভাবে তাঁর সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন—ইউরোপীয়, উর্দু, পারসি, এমনকি স্কটিশ সাহিত্য থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছেন তিনি। তাই হিন্দি গান নিয়ে এত আপত্তির কোনও মানে হয় না বলেই মনে করেন দেবলীনা। সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেবলীনার আরেকটি দৃশ্য—যেখানে চণ্ডালিকার মাথায় জল ঢেলে দেওয়া হয়। এই দৃশ্য নিয়ে অনেকে বিদ্রুপ করে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। কেউ কেউ দেবলীনার মুখ কেটে শুধু জল ঢালার মুহূর্তটিই তুলে ধরেছেন।
এতে ক্ষুব্ধ দেবলীনা জানান, এই জল ঢালার দৃশ্য একটি রূপক, যেখানে আত্মার শুদ্ধিকরণ দেখানো হয়েছে। শিল্পীর মতে, সৃজনশীল মানুষদের উচিত আগে পুরো শিল্পকর্মটা বোঝা, তারপর মতামত দেওয়া। দেবলীনার বক্তব্যের পাশাপাশি অনেক দর্শক ও শিল্পীরাও এই বিতর্কে মত দিয়েছেন। অভিনেত্রী মানসী সিনহা যেমন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “সব কিছু গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। বাঙালি যদি নিজের ঐতিহ্য ভুলে যায়, তাহলে এটাই হয়। ফিউশন করা যেতেই পারে, কিন্তু মানে তো না ভুলে যাওয়া।”
আরও পড়ুনঃ বিনোদন দুনিয়ায় ফের শোকের ছায়া! ৮৭ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে কিংবদন্তি নায়িকা!
উত্তরের জবাবে দেবলীনার দাবি, “চণ্ডালিকা-আনন্দ সম্পর্ক প্রেমের, মুক্তির প্রতীক নয়। তাই ডাকিনি বিদ্যার প্রয়োগে তাঁকে আকর্ষণ করেছিল চণ্ডালিকা, যার ফলে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হয়।” এই বিতর্ক শেষ হবে কি না, বলা মুশকিল। তবে একথা নিশ্চিত, রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে আজও বাংলা সমাজের আবেগ এতটাই প্রবল যে সেখানে কোনওরকম রূপান্তর বা ‘ফিউশন’ সহজে মেনে নেওয়া যায় না—তাতে সে যত ভালো মনের আবেগ থেকেই হোক না কেন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।